প্রিন্সেস ডায়না এর জীবনী
প্রিন্সেস ডায়না এর জীবনী

প্রিন্সেস ডায়ানার জীবনবৃত্তান্ত
পূর্ণ নাম: ডায়ানা ফ্রান্সেস স্পেন্সার
জন্ম: ১ জুলাই ১৯৬১
জন্মস্থান: পার্ক হাউস, স্যান্ড্রিংহ্যাম, নরফোক, ইংল্যান্ড
মৃত্যু: ৩১ আগস্ট ১৯৯৭, প্যারিস, ফ্রান্স
জাতীয়তা: ব্রিটিশ
পরিচিতি: প্রিন্সেস অব ওয়েলস
সন্তান: প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি
---
শৈশব ও পারিবারিক পটভূমি
ডায়ানা ফ্রান্সেস স্পেন্সার জন্মগ্রহণ করেন ব্রিটেনের অন্যতম পুরাতন অভিজাত স্পেন্সার পরিবারে। তার পিতা এডওয়ার্ড জন স্পেন্সার ছিলেন অলথরপের ভাইসকাউন্ট এবং পরবর্তীকালে অষ্টম আর্ল স্পেন্সার। মা ফ্রান্সেস শ্যান্ড কিডির সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর ডায়ানার শৈশব হয় কিছুটা বিভ্রান্তিকর ও আবেগঘন। রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ এই পরিবারের সদস্য হিসেবে তিনি শৈশব থেকেই রাজকীয় সংস্কৃতির ছোঁয়া পেয়েছেন।
---
শিক্ষাজীবন
ডায়ানার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় রিডলেসওয়ার্থ হল নামক একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে। পরে তিনি ভর্তি হন কেন্ট-এর ওয়েস্ট হিথ গার্লস স্কুলে, যেখানে তার সৃজনশীলতা, সংগীত ও নাচের প্রতি আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। পড়াশোনায় তিনি খুব উচ্চমেধার ছিলেন না, তবে সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন জনপ্রিয়, দয়ালু ও যত্নবান।
পরে তিনি সুইজারল্যান্ডের একটি ফিনিশিং স্কুলে কিছুদিন পড়াশোনা করেন, যদিও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ইংল্যান্ডে ফিরে এসে কিছু সাধারণ চাকরিতে যুক্ত হন, যা তার সরল জীবনধারার প্রমাণ বহন করে।
---
কর্মজীবন
বিবাহের পূর্বে ডায়ানা কিছুদিন লন্ডনের এক শিশুশিক্ষা কেন্দ্র (Young England Kindergarten)-এ সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কাজ করেন। এই কাজটি ছিল রাজপরিবারে প্রবেশের পূর্বে তার একমাত্র পেশাগত অভিজ্ঞতা, যা তার শিশুদের প্রতি ভালোবাসা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির নিদর্শন।
রাজপরিবারে বিবাহের পর তিনি দায়িত্বশীল রাজকীয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন বহু চ্যারিটি ও প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। গণমাধ্যমে তার উপস্থিতি তাকে একটি বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক আইকনে পরিণত করে।
---
রাজকীয় জীবন ও বিবাহ
১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই ডায়ানা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে। এই ঐতিহাসিক রাজকীয় বিয়ে বিশ্বজুড়ে ৭৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ লাইভ সম্প্রচার দেখে। বিয়ের পর তিনি “প্রিন্সেস অব ওয়েলস” উপাধি পান। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের অত্যন্ত পরিচিত মুখ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সফর, দাতব্য কার্যক্রম ও জনসাধারণের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে ছিলেন অগ্রগণ্য।
তিনি দুই পুত্রের জননী—প্রিন্স উইলিয়াম (১৯৮২) এবং প্রিন্স হ্যারি (১৯৮৪)। তিনি সন্তানদের সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন শেখানোর চেষ্টা করেন, যা রাজপরিবারে এক ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ ছিল।
---
দাতব্য কাজ ও মানবিকতা
প্রিন্সেস ডায়ানার সবচেয়ে স্মরণীয় অবদান তার দাতব্য ও মানবিক কাজ। তিনি এমন অনেক ইস্যু নিয়ে কাজ করেন, যা তখনো রাজপরিবারের জন্য অস্বস্তিকর বিষয় হিসেবে বিবেচিত হতো।
এইডস রোগীদের প্রতি সহানুভূতি: এইডস আক্রান্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও স্পর্শ করে তিনি কুসংস্কার ভেঙে দেন।
ল্যান্ডমাইন প্রতিরোধ আন্দোলন: ১৯৯৭ সালে আঙ্গোলায় যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। তার প্রচেষ্টা বিশ্বের মনোযোগ কেড়ে নেয়।
কুষ্ঠরোগ, গৃহহীনতা ও শিশুদের অধিকার: তিনি এইসব গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়ে সরাসরি মাঠে কাজ করেন।
তিনি ১০০টিরও বেশি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং তার উপস্থিতি যে কোনো কর্মসূচিকে গুরুত্ব ও গতি এনে দিত।
---
ব্যক্তিগত জীবন ও সংগ্রাম
ডায়ানার ব্যক্তিগত জীবন ছিল গণমাধ্যমের কেন্দ্রবিন্দু। প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন, মিডিয়ার চাপে জীবনযাত্রা, রাজপরিবারের নিয়মাবলী এবং আত্মসম্মানবোধ—এই সব কিছু মিলে তিনি মানসিকভাবে চাপে ছিলেন।
১৯৯২ সালে চার্লস ও ডায়ানা আলাদা হন এবং ১৯৯৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তিনি পরবর্তী সময়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হাসনাত খান এবং পরে ব্যবসায়ী দোদি আল ফায়েদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান।
---
মৃত্যু ও বিশ্ব প্রতিক্রিয়া
৩১ আগস্ট ১৯৯৭, প্যারিসে একটি মারাত্মক গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু ঘটে। এ সময় তার সঙ্গী দোদি আল ফায়েদ ও চালক হেনরি পলও নিহত হন। তার মৃত্যু বিশ্বব্যাপী গভীর শোক ও আলোড়ন সৃষ্টি করে। লক্ষ লক্ষ মানুষ রাজপ্রাসাদের বাইরে ফুল ও শ্রদ্ধার বার্তা রেখে তাকে বিদায় জানান।
৬ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ তারিখে ডায়ানার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন মানুষ টেলিভিশনে অংশ নেয়।
---
উত্তরাধিকার ও প্রভাব
প্রিন্সেস ডায়ানা মৃত্যুর পরেও বিশ্বজুড়ে মানবিকতার প্রতীক হয়ে আছেন। তার নামে “Diana, Princess of Wales Memorial Fund” গঠিত হয়, যা এখনও বিভিন্ন দাতব্য প্রকল্পে কাজ করে যাচ্ছে।
তার পুত্র উইলিয়াম ও হ্যারি—দুজনেই মায়ের দেখানো পথে সামাজিক ও দাতব্য কাজে সক্রিয়। অসংখ্য তথ্যচিত্র, জীবনীগ্রন্থ ও সিনেমার মাধ্যমে ডায়ানার জীবন এখনো আলোচনার কেন্দ্রে।
---
উপসংহার
প্রিন্সেস ডায়ানার জীবন কেবল এক রাজকন্যার নয়—একজন মানবিক, সংবেদনশীল এবং সাহসী নারীর, যিনি ভালোবাসা, দয়া ও মানবসেবার মাধ্যমে বিশ্বকে বদলে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। মৃত্যুর পরেও তিনি মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন একজন ‘পিপলস প্রিন্সেস’ হিসেবে। তার জীবন প্রমাণ করে, সত্যিকারের রাজকীয়তা আসে হৃদয় থেকে।
What's Your Reaction?






