বারাক ওবামা । শিক্ষক থেকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার গল্প
বারাক ওবামা , জিবনী

পূর্ণ নাম | বারাক হোসেইন ওবামা |
জন্ম | ৪ আগস্ট, ১৯৬১ |
জন্মস্থান | হনলুলু, হাওয়াই, যুক্তরাষ্ট্র |
পিতা | বারাক হোসেইন ওবামা সিনি অর |
মাতা | স্ট্যানলি অ্যান ডুনহ্যাম |
পেশা | রাজনীতিক, আইনজীবী, লেখক |
দাম্পত্য জীবন | মিশেল লা ভাউন রবিনসন (১৯৯২ সাল থেকে) |
সন্তান | ম্যালিয়া ওবামা, সাশা ওবামা |
ধর্ম | খ্রিস্টান (প্রেসবিটারিয়ান) |
পদবী | যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট (২০০৯–২০১৭) |
প্রাথমিক জীবন
বারাক হোসেইন ওবামার জন্ম ৪ আগস্ট ১৯৬১ সালে, হাওয়াইয়ের হনলুলু শহরে। তার পিতা ছিলেন কেনিয়ার মুসলিম, বারাক হোসেইন ওবামা সিনি অর, এবং মাতা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ মহিলা স্ট্যানলি অ্যান ডুনহ্যাম। ছোটবেলায়, তার পিতা এবং মাতা আলাদা হয়ে যান, এবং বারাক ওবামা তার মায়ের সঙ্গে হাওয়াইতে বড় হন। তিনি কিছু সময় ইন্দোনেশিয়াতেও বাস করেন, যেখানে তার মায়ের দ্বিতীয় স্বামী ছিল।
শিক্ষাজীবন
ওবামা তার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন হাওয়াইয়ের সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলে এবং পরে পেনসাকোলা হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য, তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (New York) ভর্তি হন এবং সেখানে রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে, ১৯৮৮ সালে তিনি হার্ভার্ড ল স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯৯১ সালে সেখান থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন।
পেশাগত জীবন
অধিকাংশ সময় বারাক ওবামা শিকাগোতে বসবাস করেন এবং সেখানে একটি কমিউনিটি সংগঠক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবিধান এবং আইন বিষয়ে শিক্ষকতাও করেন। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শিকাগো থেকে শুরু হয়, যেখানে তিনি শিকাগো সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হন।
রাজনৈতিক ক্যারিয়ার
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর:
বারাক ওবামা ২০০৪ সালে ইলিনয়েস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে নির্বাচিত হন। সেখানে তার বক্তৃতা এবং উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি তাকে জাতীয়ভাবে পরিচিতি এনে দেয়। ২০০৪ সালের ডেমোক্রেটিক কনভেনশনে তার বক্তব্য "থ্রিলিং" হয়ে ওঠে এবং দেশজুড়ে তার জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়।
২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন:
২০০৮ সালে, বারাক ওবামা ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী জন ম্যাককেইন। তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০৯ সালে শপথ নেন। এই জয় ছিল ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়, কারণ তিনি আফ্রিকান-আমেরিকান হিসেবে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
২০১২ সালের পুনঃনির্বাচন:
২০১২ সালে, তিনি দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন, যেখানে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওবামার শাসন
ওবামার প্রেসিডেন্ট শাসনকালে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতি ও সিদ্ধান্ত ছিল:
1. **অ্যাক্ট অব কেয়ার (Affordable Care Act)**: বারাক ওবামার সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল "অ্যাক্ট অব কেয়ার" বা "ওবামাকেয়ার", যা ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার কার্যক্রম শুরু করে। এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ আমেরিকানকে স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা দেওয়া হয় এবং স্বাস্থ্যসেবা খরচ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
2. **অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার (2008 Financial Crisis Recovery)**: ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দা থেকে পুনরুদ্ধার করার জন্য তিনি stimulus package চালু করেন, যা দেশের অর্থনীতিকে পুনরায় সচল করতে সাহায্য করে।
3. **ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধ**: ওবামা তার প্রথম মেয়াদে ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করতে শুরু করেন। এছাড়া, আফগানিস্তানে সীমিত সামরিক উপস্থিতি রাখার চেষ্টা করেন।
4. **পরিবেশনীতি**: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্তর্ভুক্ত করেন।
5. **বিদেশনীতি**: তিনি ইরান ও কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করেন এবং ইরান পারমাণবিক চুক্তিতে (২০১৫) স্বাক্ষর করেন।
6. **লিঙ্গ এবং জাতিগত সমতা**: লিঙ্গ সমতা এবং জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণের জন্য কাজ করেন এবং এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নেন।
পারিবারিক জীবন
বারাক ওবামা মিশেল লা ভাউন রবিনসনের সঙ্গে ১৯৯২ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুইটি কন্যা রয়েছে—ম্যালিয়া (জন্ম ১৯৯৮) এবং সাশা (জন্ম ২০০১)। মিশেল ওবামাও একজন গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক ফিগার এবং প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি হিসেবে অনেক সমাজসেবা কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।
লেখক হিসাবে
বারাক ওবামা বেশ কিছু বইও লিখেছেন, যার মধ্যে "ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার" (২০০৪) এবং "দ্য অডস অফ হোপ" (২০০৬) উল্লেখযোগ্য। তার লেখনীতে ব্যক্তিগত জীবন, জাতিগত সমস্যা, এবং রাজনীতি নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে।
পরবর্তী জীবন
ওবামার প্রেসিডেন্ট পদে থাকার পর, তিনি বিভিন্ন মানবাধিকার, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি **ওবামা ফাউন্ডেশন** প্রতিষ্ঠা করেন, যা তরুণদের নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ দেয় এবং সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে।
বারাক ওবামার উত্তরাধিকার
বারাক ওবামার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার একটি বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ত্বের উদাহরণ। তার নেতৃত্বের সময়, আমেরিকার বৈদেশিক নীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়, এবং দেশের অভ্যন্তরে অনেক সামাজিক ন্যায়বিচার এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো হয়। তার প্রেসিডেন্সি ছিল এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিনিধিত্ব, যা বৈচিত্র্য, সমতা, এবং ঐক্যের উপর ভিত্তি করে।
What's Your Reaction?






