ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট এর জিবনী

ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট, জিবনী

Mar 16, 2025 - 05:47
Mar 16, 2025 - 09:44
 0  0
ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট এর জিবনী
ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট

ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট (Franklin D. Roosevelt) ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট এবং তার শাসনকাল ছিল ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত। তিনি আমেরিকার ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ছিলেন এবং বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রকে মহামন্দা (Great Depression) থেকে উদ্ধারে তার কর্মসূচির জন্য স্মরণীয়। তার নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয় এবং তিনি দেশটির এক নতুন দিগন্তে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিলেন।

জন্ম পরিচয়:

  • পুরো নাম: ফ্রাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্ট
  • জন্ম তারিখ: ৩০ জানুয়ারি, ১৮৮২
  • জন্মস্থান: হাইড পার্ক, নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
  • পিতা: জেমস রুজভেল্ট
  • মাতা: সারাহ ডেলানো রুজভেল্ট

ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের পরিবার ছিল ধনী এবং সামাজিকভাবে প্রভাবশালী। তার পিতামাতার সহায়তায় তিনি উচ্চশিক্ষা লাভ করেন এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি আইনচর্চা শুরু করেন, কিন্তু রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হন।

শৈশব ও শিক্ষাজীবন:

রুজভেল্টের শৈশবকাল বেশ আরামদায়ক ছিল এবং তিনি একটি সামাজিকভাবে উচ্চ শ্রেণীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং পরে কোলম্বিয়া ল স্কুল থেকে আইন শাস্ত্রে শিক্ষিত হন। তার শিক্ষা জীবনের পর, রুজভেল্ট রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং ধীরে ধীরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠেন।

ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট ১৯৩৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং ১৯৪৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনটি পূর্ণকালীন মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু

রুজভেল্ট ১৯১০ সালে নিউইয়র্ক স্টেট সেনেটর নির্বাচিত হন এবং তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৯১৩ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের প্রশাসনে নৌবাহিনীর সহকারী মন্ত্রী পদে নিয়োগ পান। এই পদে থাকাকালীন তিনি নিজের নেতৃত্ব এবং সংগঠনক্ষমতা প্রদর্শন করেন। ১৯২০ সালে তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন, যদিও নির্বাচনে হারেন।

মহামন্দা ও অসুস্থতা

১৯২১ সালে ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট একটি মারাত্মক অসুখে আক্রান্ত হন, যেটি ছিল পোলিও, যার ফলে তিনি পা-থেকে প্যারালাইজড হয়ে পড়েন। তবে তিনি এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে রাজনৈতিক জীবন চালিয়ে যান এবং একদমই হাল ছাড়েননি। মহামন্দার সময়ে (Great Depression) অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে তিনি ১৯৩২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করেন এবং ১৯৩৩ সালের মার্চে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম দিক

ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ১৯৩৩ সালে "নিউ ডিল" (New Deal) কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর আওতায় তিনি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামলাতে এবং সমাজের অসচ্ছল মানুষদের সাহায্য করতে বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ করেন। রুজভেল্টের "নিউ ডিল" কর্মসূচি ছিল বিশাল একটি অর্থনৈতিক পুনর্গঠন পরিকল্পনা, যার মাধ্যমে বেকারত্ব কমানো, ব্যাংকিং ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার, এবং কৃষক ও শিল্পীদের সাহায্য করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও রুজভেল্টের নেতৃত্ব

১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে, রুজভেল্ট যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত করতে থাকেন। ১৯৪১ সালের ডিসেম্বর ৭ তারিখে জাপানের পার্ল হারবার আক্রমণের পর, যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়। রুজভেল্ট যুদ্ধে মিত্রদেশগুলির সাথে সম্পর্ক তৈরি করেন এবং যুদ্ধ পরিচালনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি একাধিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন, যেমন টেব্রুজ (Tehran Conference) এবং ইয়াল্টা (Yalta Conference), যেখানে তিনি বিশাল ভূরাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

রুজভেল্টের মৃতু্য

ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট ১৯৪৫ সালের ১২ই এপ্রিল তারিখে জর্জিয়ার ওয়াইলডাউফে তার শখের বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁর মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্র ও পৃথিবীজুড়ে শোকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

রুজভেল্টের গুরুত্বপূর্ণ অবদান

  1. নিউ ডিল (New Deal): তিনি দেশের অর্থনৈতিক মন্দাকে কাটিয়ে ওঠার জন্য ব্যাপক সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়ন করেন।
  2. সামাজিক নিরাপত্তা: তিনি সৃষ্টির জন্য সামাজিক নিরাপত্তা এবং পেনশন ব্যবস্থা চালু করেন।
  3. বিশ্বযুদ্ধে নেতৃত্ব: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি বিশ্ব নেতাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং মিত্রদেশগুলির মধ্যে সংহতি সৃষ্টি করেন।
  4. বিশ্ব শান্তি: রুজভেল্ট আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করার জন্য জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠার ধারণা পেশ করেন।

নীতিগত দিক

ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট ছিলেন একটি "প্রগ্রেসিভ" নেতা, যার মানে হল যে তিনি সামাজিক পরিবর্তন, সমতা এবং গণতন্ত্রের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, সুশাসন, এবং সমাজের অসচ্ছল জনগণের জন্য সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হয়।

ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট একজন মহৎ রাষ্ট্রনেতা ছিলেন, যাঁর নেতৃত্ব ও সংকল্প আজও পৃথিবীজুড়ে আলোচিত।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0