মাহাত্মা গান্ধী এর জীবনী

মাহাত্মা গান্ধী, জীবনী

Mar 17, 2025 - 04:15
Mar 17, 2025 - 13:21
 0  0
মাহাত্মা গান্ধী এর জীবনী
মাহাত্মা গান্ধী

বিষয় বিস্তারিত
পূর্ণ নাম মোহনদাস করমচন্দ গান্ধী
জন্ম তারিখ ২ অক্টোবর ১৮৬৯ (হিজরি ১২৮৬)
জন্মস্থান পোরবন্দর, গুজরাত, ভারত
পিতা করমচন্দ গান্ধী
মাতা পূর্ণবাই গান্ধী
শিক্ষা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়, আইন বিষয়ে পড়াশোনা
বিয়ে কস্তুরবা গান্ধী (১৮৮৩)
সন্তান হরিলাল, মনীলাল, রামদাস, দেবদাস
অতিথি দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা (১৮৯৩-১৯১৪)
মৃত্যু ৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮ (৭৮ বছর বয়সে)
মৃত্যুর স্থান নয়াদিল্লী, ভারত
ধর্ম হিন্দু ধর্ম
বিখ্যাত উপাধি 'মাহাত্মা' (বিশ্বব্যাপী মহিমান্বিত আধ্যাত্মিক নেতা)
বিশ্বখ্যাত নীতি অহিংসা, সত্যাগ্রহ, সাচ্চা, খাঁটি আত্মবিশ্বাস

শৈশব ও শিক্ষা:

মোহনদাস করমচন্দ গান্ধী ১৮৬৯ সালের ২ অক্টোবর গুজরাতের পোরবন্দর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন করমচন্দ গান্ধী ও পূর্ণবাই গান্ধীর চতুর্থ সন্তান। ছোটবেলা থেকেই গান্ধী অত্যন্ত সৎ, ধার্মিক এবং ন্যায়ের প্রতি আস্থা রাখতেন। তিনি পোরবন্দর শহরের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং পরবর্তীতে রাজকোট এবং আধুনিক ইংল্যান্ড শহরে তাঁর শিক্ষা জীবন অতিবাহিত করেন।

গান্ধী আইন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য ১৮৮৮ সালে ইংল্যান্ডে যান। সেখানে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে (University of London) আইন শাস্ত্রে পড়াশোনা করেন এবং ১৮٩১ সালে আইনজীবী হিসেবে পেশাদারি জীবন শুরু করেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় সংগ্রাম (১৮৯৩-১৯১৪):

গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৮৯৩ সালে একটি আইন ব্যবসায় কাজ করতে যান। দক্ষিণ আফ্রিকায় তিনি বর্ণবাদী আচরণের শিকার হন। সেখানে, গান্ধী অত্যন্ত অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করেন এবং অহিংসাসত্যাগ্রহ আন্দোলনের মূলনীতি প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি আফ্রিকার ভারতীয়দের অধিকার রক্ষা ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে শুরু করেন। ১৯১৩ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার ইন্ডিয়ান কংগ্রেস এর সহায়তায় তিনি গোর্স অ্যান্ড রেটলি এর অধীনে প্রস্তাবিত কঠোর আইন ও শোষণের বিরুদ্ধে বিপ্লবী আন্দোলন পরিচালনা করেন। তার এই আন্দোলন, যা অহিংসা নীতির মাধ্যমে পরিচালিত হত, গোটা বিশ্বের মানবাধিকার আন্দোলনে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছিল।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম (১৯১৫-১৯৪৭):

গান্ধী ১৯১৫ সালে ভারত ফিরে আসেন এবং অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। গান্ধী তার আন্দোলনগুলোতে অহিংসা ও সত্যাগ্রহের মূলনীতি অবলম্বন করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, মানুষের মন পরিবর্তন করার জন্য অহিংসা এবং সত্য এর শক্তিই যথেষ্ট।

বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন:

গান্ধী যখন ভারতের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম শুরু করেন, তখন ভারতীয়দের মধ্যে এক ধরণের ঐক্য ও চেতনা সৃষ্টি করতে তার স্বদেশী আন্দোলন শুরু করেন। তিনি বিদেশি পণ্যের বয়কট এবং ভারতের জন্য হোম রুল বা স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন করেন।

চাল ক্ষেত্র আন্দোলন (১৯৩০):

গান্ধী তার সবচেয়ে বিখ্যাত আন্দোলন শুরু করেন ১৯৩০ সালে। সলো আন্দোলন নামে পরিচিত এ আন্দোলন চালের করের বিরুদ্ধে ছিল। তিনি ভারতের মধ্য দিয়ে ২৪১ মাইল হাঁটলেন, যা দান্তি মার্চ নামে পরিচিত। এই আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি ব্রিটিশ সরকারের অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে একত্রিত করেছিলেন।

ভারতের অবাধ স্বাধীনতা:

ভারতের ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভ ছিল গান্ধীর নেতৃত্বে চলা দীর্ঘ সংগ্রামের ফল। তবে এই স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ ছিল একাধিক সংগ্রাম, লড়াই, এবং অস্থিরতা। গান্ধী, যদিও ভারতে ইংরেজদের শাসনমুক্ত করার জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন, তার লক্ষ্য ছিল শান্তিপূর্ণ, ধর্মনিরপেক্ষ এবং অসাম্প্রদায়িক ভারত গঠন করা।

ভারত বিভাজন এবং শান্তির পথ:

ভারতের স্বাধীনতার পাশাপাশি, ব্রিটিশরা ভারতকে দুটি ভাগে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নেন - ভারত এবং পাকিস্তান। এই বিভাজন ছিল অত্যন্ত হৃদয়বিদারক, এবং লাখ লাখ মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে।

গান্ধী এই সময় কঠিন দুঃখে ডুবে গিয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তানের মুসলমানদের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তার ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং সহযোগিতা ছিল তাঁর আদর্শের ভিত্তি। পাকিস্তানে হিন্দু মুসলমানদের সংঘর্ষের কারণে গান্ধী অনেকদিন পর্যন্ত সেই অঞ্চলে শান্তির কাজ করেন।

গান্ধী হত্যার ঘটনা (১৯৪৮):

গান্ধী ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পরও তার শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক কাজ করেছেন। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি, দিল্লির প্রার্থনাসভায় নাথুরাম গডসে নামে এক ব্যক্তি গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করেন। গান্ধীর মৃত্যু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি অদম্য ক্ষতি হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু তার আদর্শ আজও বিশ্বের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।

গান্ধীর আদর্শ ও প্রভাব:

মাহাত্মা গান্ধী তার জীবনব্যাপী এক অদ্বিতীয় আদর্শ ও নীতি অনুসরণ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, অহিংসা (অভীষ্ট শত্রুকে আঘাত না করার নীতি), সত্যাগ্রহ (অনৈতিক অবস্থার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ), এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতা (বিশ্বস্তভাবে মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ) দিয়ে সমাজে শান্তি, ন্যায় এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

গান্ধী শুধুমাত্র ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা ছিলেন না, তিনি বিশ্বব্যাপী অহিংসা আন্দোলনের প্রবর্তকও ছিলেন। তার জীবন ও আদর্শ বিভিন্ন মানবাধিকার আন্দোলন, জাতিগত সমতা, এবং শান্তির প্রচারের পথ দেখিয়েছে।

গান্ধীর উপদেশ:

  • "বিশ্বের মধ্যে তোমরা যা দেখতে চাও, সেই পরিবর্তনটি নিজেদের মধ্যে আনো।"
  • "চিন্তা কর, বল, কাজ কর—তিনটি মৌলিক স্তম্ভ তোমার জীবনের কাজের।"
  • "অহিংসা আসল শক্তি।"

উপসংহার:

মাহাত্মা গান্ধী ছিলেন একজন মহান নেতা, যিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে শুধু নেতৃত্বই দেননি, বরং বিশ্বকে অহিংসার শক্তি ও সত্যের গুরুত্ব শিখিয়েছেন। তার আদর্শ ও কাজ আজও বিশ্বের বিভিন্ন আন্দোলনে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0