ইশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জীবন ও সাহিত্যকর্ম
ইশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জীবন ও সাহিত্যকর্ম

বিষয় | বিবরণ |
---|---|
পুরো নাম | ইশ্বরচন্দ্র গুপ্ত |
জন্ম | ৬ মার্চ ১৮১২, কালীঘাট, কলকাতা, ব্রিটিশ ভারত |
আদি নিবাস | বিক্রমপুর, মুনশিগঞ্জ, বর্তমান বাংলাদেশ |
পিতা | হারানচন্দ্র গুপ্ত |
শিক্ষা | প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও স্বশিক্ষায় বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় দক্ষতা |
প্রথম সাহিত্যচর্চা | কিশোর বয়সে কবিতা রচনার মাধ্যমে |
প্রধান সাহিত্যধারা | ব্যঙ্গকবিতা, প্রাচীন ধ্রুপদী কাব্যরীতি |
প্রধান অবদান | বাংলা ব্যঙ্গকবিতার প্রবর্তন ও বাংলা সাংবাদিকতার অগ্রদূত |
সম্পাদিত পত্রিকা | সংবাদ প্রভাকর |
সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্য | ব্যঙ্গরস, সামাজিক সমালোচনা, প্রাচীন ভাষার ব্যবহার |
সমসাময়িক ব্যক্তিত্ব | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মধুসূদন দত্ত |
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি | কুসংস্কার, গোঁড়ামি ও সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব |
মৃত্যু | ২৩ জানুয়ারি ১৮৫৯, কলকাতা |
ঐতিহাসিক মর্যাদা | নবজাগরণ যুগের অন্যতম পথিকৃৎ |
ভূমিকা
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে উনিশ শতককে নবজাগরণের যুগ হিসেবে অভিহিত করা হয়। এই যুগে যে কয়েকজন মনীষী তাঁদের জ্ঞানের আলো দিয়ে সমাজ ও সাহিত্যকে আলোকিত করেছেন, তাঁদের মধ্যে ইশ্বরচন্দ্র গুপ্ত অন্যতম। তিনি শুধু একজন কবি নন, ছিলেন সম্পাদক, সাংবাদিক এবং সাহিত্যসংস্কারক। বাংলা সাংবাদিকতার অগ্রদূত হিসেবে তাঁর অবদান যেমন বিশাল, তেমনি ব্যঙ্গকবিতার প্রবর্তক হিসেবেও তিনি স্মরণীয়। তাঁর সাহিত্যকর্ম ও সমাজ ভাবনা বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
জন্ম ও শৈশব
ইশ্বরচন্দ্র গুপ্ত জন্মগ্রহণ করেন ১৮১২ সালের ৬ই মার্চ কলকাতার কালীঘাটে। তাঁর আদি নিবাস ছিল বিক্রমপুর (বর্তমান বাংলাদেশের মুনশিগঞ্জ জেলা)। পিতার নাম ছিল হারানচন্দ্র গুপ্ত। পিতৃবিয়োগের পর মাতার তত্ত্বাবধানে তাঁর শৈশব কাটে। তিনি প্রথাগত বিদ্যালয়শিক্ষা না পেলেও নিজ প্রচেষ্টায় বাংলা ও সংস্কৃত ভাষায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।
সাহিত্যজীবনের সূচনা
ইশ্বরচন্দ্র গুপ্ত অল্প বয়স থেকেই কবিতা লিখতে শুরু করেন। তাঁর রচনায় প্রাচীন ধ্রুপদী ধারার প্রভাব লক্ষণীয়, তবে তা ছিল নিজস্ব কৌশলে পরিবেশিত। তিনি বিদ্যাচর্চার পাশাপাশি সমাজের নানা সমস্যা ও অসঙ্গতির প্রতি সচেতন ছিলেন। তাঁর সাহিত্যচর্চার শুরু মূলত কাব্য রচনার মধ্য দিয়ে হলেও সাংবাদিকতা ছিল তাঁর প্রধান শক্তি।
সাংবাদিকতা ও সম্পাদনা
বাংলা সাংবাদিকতার ইতিহাসে তাঁর নাম চিরস্মরণীয়। তিনি "সংবাদ প্রভাকর" নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রতিষ্ঠা ও সম্পাদনা করেন, যা পরবর্তীতে একটি প্রভাবশালী দৈনিকে পরিণত হয়। এই পত্রিকার মাধ্যমে তিনি কুসংস্কার, সামাজিক বৈষম্য, ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে কলম ধরেন। সংবাদ প্রভাকরের কলামগুলোতে তিনি বাঙালির চিন্তাজগতে যুক্তিবাদ, মানবতা ও আত্মসম্মানবোধ জাগিয়ে তুলেছিলেন।
সাহিত্যিক অবদান ও ব্যঙ্গরস
ইশ্বরচন্দ্র গুপ্ত বাংলা ব্যঙ্গকবিতার পথিকৃৎ। তাঁর কবিতায় ছিল প্রচণ্ড রসবোধ, ভাষার দখল, এবং তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ। তিনি সমাজের গোঁড়ামি, শিক্ষার অভাব, নারী-অবস্থান, কুশিক্ষা প্রভৃতির বিরুদ্ধে তাঁর রচনায় রসবোধপূর্ণ সমালোচনা করেছেন। প্রাচীন কাব্যরীতির অনুরাগী হলেও তিনি আধুনিক বোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রমুখ তাঁর সাহচর্যে থেকে উপকৃত হন।
মৃত্যুকাল
ইশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ১৮৫৯ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতায় পরলোকগমন করেন। তাঁর প্রস্থান বাংলা সাহিত্য ও সাংবাদিকতা জগতে এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি করে।
উপসংহার
ইশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ছিলেন বাংলা সাহিত্যের নবজাগরণ যুগের অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি ব্যতিক্রমী দৃষ্টিভঙ্গি, সাহসী কলম এবং তীক্ষ্ণ রসবোধ দিয়ে বাংলা সাহিত্যে এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর সাহিত্যচর্চা ও সাংবাদিকতাকে কেন্দ্র করে বাঙালি সমাজে নতুন চিন্তা ও মত প্রকাশের পথ উন্মোচিত হয়। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তাঁর অবদান শুধু ইতিহাসের অংশ নয়, তা বাঙালি জাতির মননচর্চার ঐতিহ্যও। ইশ্বরচন্দ্র গুপ্তের জীবন ও কর্ম তাই যুগ যুগ ধরে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
What's Your Reaction?






