স্যার আইজ্যাক নিউটনের জীবনী
স্যার আইজ্যাক নিউটনের জীবনী

বিষয় | তথ্য |
---|---|
পূর্ণ নাম | স্যার আইজ্যাক নিউটন (Sir Isaac Newton) |
জন্ম তারিখ | ২৫ ডিসেম্বর, ১৬৪২ (জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী)৪ জানুয়ারি, ১৬৪৩ (গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী) |
জন্মস্থান | উল্সথর্প, লিংকনশায়ার, ইংল্যান্ড |
মৃত্যু তারিখ | ২০ মার্চ, ১৭২৭ (জুলিয়ান)৩১ মার্চ, ১৭২৭ (গ্রেগোরিয়ান) |
মৃত্যুস্থান | লন্ডন, ইংল্যান্ড |
জাতীয়তা | ইংরেজ |
পেশা | পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, দার্শনিক, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, রসায়নবিদ |
বিশ্ববিদ্যালয় | ট্রিনিটি কলেজ, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় |
বিখ্যাত আবিষ্কার | - মহাকর্ষের সূত্র (Law of Gravitation) - নিউটনের গতিসূত্র (Laws of Motion) - ক্যালকুলাসের ভিত্তি - প্রতিসরণ টেলিস্কোপ |
বিখ্যাত গ্রন্থ | Philosophiæ Naturalis Principia Mathematica (প্রিন্সিপিয়া, ১৬৮৭) |
উপাধি | "স্যার" (১৬৭৭ সালে নাইট উপাধি লাভ করেন) |
সমাধিস্থল | ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবি, লন্ডন |
🔹 ভূমিকা
স্যার আইজ্যাক নিউটন ছিলেন একজন ইংরেজ গণিতবিদ, পদার্থবিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও রসায়নবিদ, যিনি বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিপ্লব এনেছেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি রচনা করেন। তাঁর আবিষ্কৃত মহাকর্ষের সূত্র, গতি সূত্রসমূহ, এবং ক্যালকুলাসের বিকাশ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যুগান্তকারী প্রভাব ফেলেছে।
🔹 জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
-
জন্ম: ২৫ ডিসেম্বর ১৬৪২ (জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী), উল্স্থর্প-হ্যামলেট, লিঙ্কনশায়ার, ইংল্যান্ড।
-
মৃত্যু: ২০ মার্চ ১৭২৭, লন্ডন, ইংল্যান্ড।
নিউটন জন্মগ্রহণ করেন তাঁর পিতার মৃত্যুর তিন মাস পর। তাঁর মা হান্না এস্কিউ তাঁকে বড় করেন। শৈশবকাল ছিল নিঃসঙ্গ এবং বর্ণহীন। ছোটবেলায় তিনি অত্যন্ত অন্তর্মুখী এবং গভীরভাবে চিন্তাশীল ছিলেন।
🔹 শিক্ষা
নিউটন প্রথমে স্থানীয় কিংস স্কুল, গ্রান্থাম-এ ভর্তি হন। সেখানে তিনি ধীরে ধীরে পড়াশোনায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরে ১৬৬১ সালে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হন।
এই সময়েই তিনি গ্যালিলিও, কেপলার, ডেকার্তের মত দার্শনিক ও বিজ্ঞানীদের লেখা পড়েন এবং নিজেই গবেষণা শুরু করেন।
🔹 প্লেগ ও 'মিরাকল ইয়ার' (1665-1666)
১৬৬৫ সালে প্লেগ মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে নিউটন গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। এই সময়টিকেই বিজ্ঞানীরা বলেন নিউটনের "Miracle Year" বা "অলৌকিক বছর", কারণ তিনি ওই দুই বছরে:
-
মহাকর্ষ সূত্র আবিষ্কার করেন (ঐতিহাসিক গল্প অনুযায়ী একটি আপেল গাছ থেকে আপেল পড়ে দেখে তিনি এই ধারণা পান)
-
গতি সূত্রসমূহ (Laws of Motion) তৈরি করেন
-
ক্যালকুলাসের ভিত্তি রচনা করেন
-
আলোক বিজ্ঞানে গবেষণা শুরু করেন
🔹 প্রধান বৈজ্ঞানিক অবদানসমূহ
১. 🌌 মহাকর্ষ সূত্র (Law of Universal Gravitation)
তিনি প্রমাণ করেন, প্রত্যেক বস্তু অন্য বস্তুর ওপর নির্দিষ্টভাবে আকর্ষণ (gravitational force) প্রয়োগ করে যা তাদের ভর ও পরস্পরের মধ্যকার দূরত্বের ওপর নির্ভর করে। সূত্রটি হলো:
২. 🌀 গতি সূত্রসমূহ (Newton's Laws of Motion)
তিনি পদার্থবিজ্ঞানের তিনটি মৌলিক সূত্র প্রণয়ন করেন:
-
প্রথম সূত্র (Inertia): বিশ্রামে থাকা বস্তু বিশ্রামে এবং গতিশীল বস্তু সমবেগে চলতে থাকে যতক্ষণ না কোনো বাহ্যিক বল প্রয়োগ হয়।
-
দ্বিতীয় সূত্র (F=ma): একটি বস্তুর ত্বরণ তার ভরের উপর এবং বলের অনুপাতে ঘটে।
-
তৃতীয় সূত্র: প্রত্যেক ক্রিয়ার বিপরীতমুখী ও সমান প্রতিক্রিয়া থাকে।
৩. 🔭 আলোকবিজ্ঞান (Optics)
তিনি প্রথম দেখান যে সাদা আলো প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন রঙের সমন্বয়ে গঠিত। প্রিজম ব্যবহার করে তিনি রঙের বর্ণালী বিভাজন করে এই প্রমাণ দেন।
তিনিই প্রথম প্রতিফলন টেলিস্কোপ তৈরি করেন যা পরবর্তীকালে “নিউটোনিয়ান টেলিস্কোপ” নামে পরিচিত।
৪. 📈 ক্যালকুলাসের বিকাশ
যদিও একই সময়ে গণিতবিদ লাইবনিজও ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেন, নিউটন স্বাধীনভাবে এটি আবিষ্কার করেন এবং এটি পদার্থবিজ্ঞানে ব্যবহার করে বিপ্লব ঘটান।
🔹 প্রখ্যাত গ্রন্থ
-
"Philosophiæ Naturalis Principia Mathematica" (১৬৮৭)
এটি নিউটনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। এখানে তিনি গতি ও মহাকর্ষ সূত্র ব্যাখ্যা করেছেন। এই গ্রন্থটিকে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়।
🔹 সম্মান ও স্বীকৃতি
-
১৬৯৬ সালে তিনি রয়েল মিন্টের ওয়ার্ডেন এবং পরে মাস্টার নিযুক্ত হন।
-
১৭০৩ সালে রয়্যাল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট হন।
-
১৭০৫ সালে ইংল্যান্ডের রানি রাণী অ্যান তাঁকে "নাইট" উপাধি প্রদান করেন – তাই তিনি "স্যার আইজ্যাক নিউটন"।
🔹 ব্যক্তিজীবন ও মৃত্যু
নিউটন জীবনে কখনও বিয়ে করেননি। তিনি একাকী, নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করতেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় কাজ করে গেছেন।
তিনি ২০ মার্চ ১৭২৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন এবং ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত হন।
🔹 নিউটনের উত্তরাধিকার
-
নিউটনের কাজ আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান, মহাকাশবিজ্ঞান ও প্রকৌশলের ভিত্তি রচনা করেছে।
-
তাঁর নামেই পদার্থবিজ্ঞানে অনেক একক ও ধারণা তৈরি হয়েছে (যেমন: "নিউটন" বলের একক)।
-
তিনি শুধু একজন বিজ্ঞানীই ছিলেন না; বরং আধুনিক বিজ্ঞানের এক অবিনাশী স্তম্ভ।
✅ উপসংহার
স্যার আইজ্যাক নিউটন ছিলেন এমন একজন মনীষী, যিনি নিজ চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে বিশ্বজগতের বহু রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাঁর অবদান শুধু বিজ্ঞানের নয়, বরং মানব সভ্যতার ইতিহাসেও চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি নিজেই একবার বলেছিলেন:
“If I have seen further, it is by standing on the shoulders of giants.”
What's Your Reaction?






