পেলের জীবনী | Pele Biography in Bengali

পেলে ছিলেন এমন এক ফুটবল কিংবদন্তি, যাকে অনেকেই "ফুটবলের রাজা" বা "The King of Football" বলে জানেন। তার জাদুকরী খেলা, বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সাফল্য, এবং ফুটবলকে বিশ্বমঞ্চে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে তার অবদান অনস্বীকার্য। ব্রাজিলের সাধারণ একটি পরিবার থেকে উঠে এসে তিনি হয়ে ওঠেন আন্তর্জাতিক ক্রীড়াবিশ্বের এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্র।

May 17, 2025 - 06:34
May 17, 2025 - 11:31
 0  1
পেলের জীবনী | Pele Biography in Bengali
বিষয় তথ্য
পুরো নাম এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো (Edson Arantes do Nascimento)
ডাকনাম পেলে
জন্মতারিখ ২৩ অক্টোবর ১৯৪০
জন্মস্থান ত্রেস কোরাকোয়েস, মিনাস জেরাইস, ব্রাজিল
পিতার নাম জোয়াও র‍্যামোস দো নাসিমেন্তো (ডোনদিনহো)
মাতার নাম সেলেস্টে আরান্তেস
স্ত্রী তিনবার বিবাহিত (সর্বশেষ: মার্সিয়া সিবেলে আওকি)
সন্তানের সংখ্যা ৭ জন
উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি (১.৭৩ মিটার)
পেশাগত অভিষেক ১৯৫৬ সালে, সান্তোস ক্লাবে
খেলার পজিশন ফরোয়ার্ড / অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার
জাতীয় দল ব্রাজিল (১৯৫৭–১৯৭১)
প্রধান ক্লাবসমূহ সান্তোস, নিউ ইয়র্ক কসমস
প্রধান অর্জন ৩টি বিশ্বকাপ (১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০), ১২৮১ গোল
মৃত্যু ২৯ ডিসেম্বর ২০২২
মৃত্যুর স্থান সাও পাওলো, ব্রাজিল

শৈশব ও ছোটবেলা

পেলের জন্ম হয় এক দরিদ্র পরিবারে। ছোটবেলায় তিনি জুতা ছাড়াই ফুটবল খেলতেন এবং কাগজ বা কাপড় দিয়ে বানানো বল দিয়ে খেলার চর্চা করতেন। তার বাবা ছিলেন একজন ফুটবলার যিনি চোট পেয়ে ক্যারিয়ার শেষ করতে বাধ্য হন। বাবার কাছ থেকেই ফুটবলের হাতেখড়ি হয় পেলের।


পেশাদার ফুটবল জীবন শুরু

মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি সান্তোস ক্লাবে যোগ দেন এবং ১৬ বছর বয়সে জাতীয় দলে অভিষেক ঘটে। দ্রুতই তিনি ফুটবলবিশ্বের নজরে চলে আসেন তার অসাধারণ দক্ষতা, গতি ও গোল করার ক্ষমতার জন্য।


বিশ্বকাপের ইতিহাসে পেলে

পেলের সবচেয়ে বড় কীর্তি তার বিশ্বকাপে পারফরম্যান্স। তিনি ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় যিনি ৩টি বিশ্বকাপ জিতেছেন

  1. ১৯৫৮ বিশ্বকাপ (সুইডেন) – মাত্র ১৭ বছর বয়সে ৬ গোল করে বিশ্বকাপ জেতান

  2. ১৯৬২ বিশ্বকাপ (চিলি) – ইনজুরির কারণে আংশিক খেললেও ব্রাজিল জয়লাভ করে

  3. ১৯৭০ বিশ্বকাপ (মেক্সিকো) – অন্যতম সেরা বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স, ৪ গোলসহ অবদান


ক্লাব ক্যারিয়ার

সান্তোস এফসি (১৯৫৬–১৯৭৪)

  • ১৯ বছর খেলেছেন একটিই ক্লাবে

  • ৬৪১ গোল (ক্লাব রেকর্ড)

  • বহুবার লিগ শিরোপা, কোপা লিবার্তাদোরেস ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ জয়

নিউ ইয়র্ক কসমস (১৯৭৫–১৯৭৭)

  • অবসর নেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য এই ক্লাবে যোগ দেন

  • ফুটবলের আন্তর্জাতিক দূত হয়ে উঠেন


ব্যক্তিগত অর্জন ও রেকর্ড

  • ১২৮১ গোল (বিভিন্ন উৎস মতে, অফিসিয়ালি ৭৬৭+ গোল স্বীকৃত)

  • FIFA Player of the Century (Maradona’র সাথে যুগ্মভাবে)

  • TIME Magazine’s 100 Most Important People of the 20th Century

  • ব্রাজিলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা (জাতীয় দলের হয়ে ৭৭ গোল)

  • খেলোয়াড় হিসেবে UN ও UNICEF–এর দূত ছিলেন


মৃত্যুর খবর ও শ্রদ্ধাঞ্জলি

২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর, দীর্ঘদিন কোলন ক্যান্সারে ভুগে পেলে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর বিশ্বের সবপ্রান্ত থেকে রাষ্ট্রপ্রধান, খেলোয়াড়, ভক্ত ও সাধারণ মানুষ তাকে শ্রদ্ধা জানান। ব্রাজিল সরকার ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে।


পেলের উত্তরাধিকার

পেলে শুধু একজন খেলোয়াড় ছিলেন না — তিনি ছিলেন একটি যুগ, একটি নাম, একটি ব্র্যান্ড, ফুটবলের সবচেয়ে বড় আদর্শ। তার প্রভাব ছিল শুধুমাত্র মাঠে নয়, বরং মাঠের বাইরেও — বিশ্বজুড়ে ফুটবলের প্রসারে এবং সামাজিক সচেতনতায়।


উপসংহার

পেলের জীবনী শুধুই একজন সফল খেলোয়াড়ের গল্প নয়; এটি এক অনুপ্রেরণামূলক কাহিনী যে কিভাবে একজন দরিদ্র ছেলেও বিশ্বকে জয় করতে পারে। তিনি চিরকাল ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0