মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের জীবনী
জো বাইডেন, জীবনী

জো বাইডেনের পূর্ণাঙ্গ জীবনী
পূর্ণ নাম | জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র |
জন্ম | ২০ নভেম্বর, ১৯৪২ |
জন্মস্থান | স্ক্যানটন, পেনসিলভানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র |
পিতা | জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনি |
মাতা | ক্যাথরিন "ক্যাথি" জেন (নিউকোম্ব) |
পেশা | রাজনীতিক, আইনজীবী |
দাম্পত্য জীবন | জিল বাইডেন (১৯৭৭ সাল থেকে) |
সন্তান | ডেভিড, আশলি, বো, হান্টার (সন্তানদের মধ্যে বো এবং হান্টার গুরুত্বপূর্ণ জনসমক্ষে পরিচিত) |
ধর্ম | ক্যাথলিক |
পদবী | যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট (২০২১–বর্তমান), ৪৭তম উপ-প্রেসিডেন্ট (২০০৯–২০১৭) |
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর পেনসিলভানিয়ার স্ক্যানটন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা, জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনি, ছিলেন একজন ব্যবসায়ী এবং তার মা, ক্যাথরিন "ক্যাথি" বাইডেন, ছিলেন গৃহিণী। বাইডেনের শৈশব বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। তিনি কথায় কিছুটা অস্বচ্ছতা বা জড়তা (stuttering) ভুগতেন, কিন্তু সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে তিনি কঠোর পরিশ্রম করেন এবং তা নিয়ে গর্বিত ছিলেন।
বাইডেন কাতোলিক ধর্মাবলম্বী, এবং তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় স্ক্যানটনের আর্চবিশপ ইউজিন গ্লেনন স্কুলে। পরে তিনি ডেলাওয়ারের ইউনিভার্সিটি অফ ডেলাওয়ার থেকে ইতিহাস ও রাজনৈতিক বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন (১৯৬৫)। এরপর তিনি সিরাকিউস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন (১৯৬৮)।
### প্রাথমিক রাজনৈতিক ক্যারিয়ার
বাইডেনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ১৯৭০ সালের দিকে শুরু হয়, যখন তিনি ডেলাওয়ারে আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। ১৯৭২ সালে, ৩০ বছর বয়সে, তিনি ডেলাওয়ারের সিনেটের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং জয়লাভ করেন, যা তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ সিনেটরদের মধ্যে একটি করে তোলে। বাইডেনের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার প্রায় পুরো সময়ই ডেলাওয়ার রাজ্যে অবস্থিত, তবে তিনি জাতীয় পর্যায়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
ব্যক্তিগত শোক
১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর, বাইডেনের জীবন অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে পড়ে। সে বছরই, তার প্রথম স্ত্রী, নিলা, এবং তাদের এক বছর বয়সী কন্যা, নোয়েল, গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। বাইডেন নিজেও এই দুর্ঘটনায় আহত হন। এই শোকজনক ঘটনার পর তিনি কিছু সময়ের জন্য সিনেটের দায়িত্ব থেকে বিরতি নেন, তবে তার মা এবং পরিবারের সহায়তায় তিনি আবার নিজের জীবন চালিয়ে নিতে সক্ষম হন। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৭ সালে তিনি জিল জ্যাকবসের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একটি কন্যা, আশলি, রয়েছে।
সিনেটর হিসেবে বাইডেনের কার্যক্রম
বাইডেন দীর্ঘদিন ডেলাওয়ার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে নির্বাচিত হয়ে কাজ করেন, প্রায় ৩৬ বছর ধরে তিনি সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সিনেটে তার কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল:
বিদেশনীতি
বাইডেন বিদেশ নীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে বিশেষভাবে সক্রিয় ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়ক আলোচনায় অংশ নেন।
- **অপরাধ নিয়ন্ত্রণ:** ১৯৯৪ সালে, বাইডেন "অপারেশন হলোগ্রাফি" শিরোনামে একটি আইন তৈরি করেন, যা অপরাধপ্রবণ এলাকায় পুলিশির ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই আইনটি পরে দেশব্যাপী অপরাধ নিয়ন্ত্রণের একটি বড় অংশ হয়ে ওঠে।
- **আইন সংস্কার:** বাইডেন ব্যক্তি অধিকার, অভিবাসন এবং রাজনৈতিক প্রতিরক্ষা বিষয়ে নানা আইন পাস করেন।
২০০৮ সালের উপ-প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
২০০৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিসেবে বারাক ওবামা নির্বাচন করে জয়লাভ করেন এবং তাকে তার সহকারী হিসেবে উপ-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন। বাইডেন উপ-প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০০৯ সালে এবং ২০১২ সালে আবারও নির্বাচিত হন।
ওবামা-বাইডেন প্রশাসনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার:২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দা পরবর্তী সময়ে বাইডেন এবং ওবামা প্রশাসন দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন। "স্টিমুলাস প্যাকেজ" এবং নানা সামাজিক কল্যাণ কর্মসূচির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে।
স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার:২০১০ সালে, বাইডেনের সমর্থনে "অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট" পাস হয়, যা প্রায় ২০ মিলিয়ন আমেরিকানকে স্বাস্থ্য বীমার সুবিধা প্রদান করে।
বিদেশনীতি: বাইডেন বিদেশে বিভিন্ন সামরিক উদ্যোগে যুক্ত ছিলেন এবং তিনি ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন সেনা কমানোর জন্য সহায়তা করেছিলেন। ২০১১ সালে, ওসামা বিন লাদেনের হত্যায় বাইডেনের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
বাইডেন ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন রিপাবলিকান প্রার্থী, incumbent প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাইডেন নির্বাচনে জয়লাভ করে ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে শপথ গ্রহণ করেন।
বাইডেন প্রশাসনের কিছু প্রধান পদক্ষেপ:
কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা:বাইডেন প্রশাসন কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় ব্যাপক ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচি চালু করেন এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেন।
পরিবর্তনশীল জলবায়ু নীতি: তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে যান এবং আরও শক্তিশালী জলবায়ু নীতি গ্রহণের জন্য কাজ করছেন।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন:বাইডেন "আমেরিকান রেসকিউ প্ল্যান" চালু করেন, যা কোভিড-১৯ প্যানডেমিক থেকে পুনরুদ্ধারে বিভিন্ন অর্থনৈতিক উদ্যোগ নেন।
পারিবারিক জীবন
বাইডেনের দুই ছেলে, হান্টার এবং বো। ২০১৫ সালে, তার বড় ছেলে বো বাইডেন ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুবরণ করেন, যা বাইডেনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। পরবর্তীতে, বাইডেন তার পরিবারের জন্য শক্তি এবং উদ্দীপনার উৎস হিসেবে কাজ করেন।
বাইডেনের উত্তরাধিকার
জো বাইডেনের রাজনৈতিক জীবন এবং শাসন আমেরিকার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় হয়ে থাকবে। তার নেতৃত্বে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে জাতিগত বৈষম্য, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করার মতো বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। তার শাসন আমলে মার্কিন জনগণের জন্য একটি ন্যায়সঙ্গত এবং ঐক্যবদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।
What's Your Reaction?






