অ্যালেকজান্ডার দ্য গ্রেটের পূর্ণাঙ্গ জীবনী
অ্যালেকজান্ডার দ্য গ্রেট, জীবনী

বিষয় | বিস্তারিত |
---|---|
পূর্ণ নাম | অ্যালেকজান্ডার III (Alexander III of Macedon) |
জন্ম তারিখ | ৩৬৫ খ্রিস্টপূর্ব ২০ জুলাই |
জন্মস্থান | পেলা, মেসিডোনিয়া (বর্তমান গ্রীস) |
পিতা | ফিলিপ II (Philip II of Macedon) |
মাতা | অলিম্পিয়াস (Olympias) |
শিক্ষা | অ্যারিস্টটল (Aristotle) থেকে শিক্ষা |
সামরিক ক্যারিয়ার শুরু | ১৮ বছর বয়সে মেসিডোনিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগদান |
সিংহাসনে আরোহন | ৩৩৬ খ্রিস্টপূর্ব, পিতার মৃত্যুতে |
প্রধান যুদ্ধ | ইস্যুস যুদ্ধ, গগামেলা যুদ্ধ, হাইডেসপিস যুদ্ধ |
রাজ্য বিস্তার | গ্রিস, ফার্সি সাম্রাজ্য, মিশর, ভারতীয় উপমহাদেশের কিছু অংশ |
মৃত্যু | ৩২৩ খ্রিস্টপূর্ব, ১০ জুন, বাবিলন |
মৃত্যুর কারণ | অজ্ঞাত, তবে কিছু উৎস অনুসারে ম্যালেরিয়া বা বিষক্রিয়া হতে পারে |
উত্তরাধিকার | বিশাল সাম্রাজ্য, গ্রীক সংস্কৃতির প্রসার |
অ্যালেকজান্ডার দ্য গ্রেট (৩৬৫ - ৩২৩ খ্রিস্টপূর্ব) ছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং সফল সামরিক নেতা। তিনি মেসিডোনিয়ার রাজা ফিলিপ II এবং তার মাতা অলিম্পিয়াস এর পুত্র। তার শাসনকালে তিনি প্রায় সমগ্র পৃথিবীকে বিজয়ী করেন এবং একটি বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন, যা পরবর্তীতে ইতিহাসের অন্যতম সবচেয়ে বৃহত্তম সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত।
শৈশব ও শিক্ষা:
অ্যালেকজান্ডার জন্মগ্রহণ করেন পেলা, মেসিডোনিয়ায়, ৩৬৫ খ্রিস্টপূর্ব। তার পিতা ফিলিপ II ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা এবং মাতা অলিম্পিয়াস ছিলেন একটি শক্তিশালী রাজপরিবারের সদস্য। শৈশবেই তার শিক্ষার প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল। তাকে সেরা গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল দ্বারা শিক্ষা প্রদান করা হয়। অ্যারিস্টটল তাকে বিজ্ঞানের, দর্শনের, রাজনীতি, সাহিত্য এবং যুদ্ধের কৌশলের পাঠ দিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে তার সামরিক কৌশল এবং শাসনের ক্ষেত্রে প্রভাবিত হয়েছিল।
সামরিক ক্যারিয়ার:
অ্যালেকজান্ডার মাত্র ১৮ বছর বয়সে তার পিতার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং তার সেনাবাহিনীকে একটি সফল অভিযানে নেতৃত্ব দেন। এরপর ৩৩৬ খ্রিস্টপূর্বে, যখন তার পিতা ফিলিপ II নিহত হন, তখন অ্যালেকজান্ডার মেসিডোনিয়ার সিংহাসনে বসেন। শীঘ্রই তিনি মেসিডোনিয়া এবং গ্রিসের সমস্ত রাজ্যকে একত্রিত করে তাদের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন।
বিশাল সাম্রাজ্য গঠন:
অ্যালেকজান্ডার তার শাসনকাল শুরু করার পর তুরস্কের বর্তমান অঞ্চলে ফার্সি সাম্রাজ্য এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। ৩৩৩ খ্রিস্টপূর্বে ইস্যুস যুদ্ধে তিনি ফার্সি রাজা দারিউস III কে পরাজিত করেন এবং সেখান থেকেই তার সাম্রাজ্য বিস্তার শুরু হয়। এরপর গগামেলা যুদ্ধে (৩৩১ খ্রিস্টপূর্ব) তিনি আবারও দারিউসকে পরাজিত করেন এবং পুরো ফার্সি সাম্রাজ্য অধিকার করেন। তিনি মিশর জয় করেন এবং সেখানকার শহর আলেকজান্দ্রিয়া প্রতিষ্ঠা করেন, যা তার নামানুসারে নামকরণ করা হয়।
অ্যালেকজান্ডার তারপর ভারতীয় উপমহাদেশের দিকে অগ্রসর হন এবং ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বে হাইডেসপিস যুদ্ধে (বর্তমান পাকিস্তান) পোরাস নামে এক ভারতীয় রাজাকে পরাজিত করেন।
স্বপ্ন পূরণের পথে:
অ্যালেকজান্ডার তার সাম্রাজ্য বিস্তৃত করার লক্ষ্যে অনেক দেশ ও অঞ্চল জয়ের পরিকল্পনা করেছিলেন। তার লক্ষ্য ছিল পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকা এবং ভারতকে একত্রিত করা এবং একটি বিশাল গ্রীক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে গ্রীক সংস্কৃতি এবং ভাষার প্রচার করেছিলেন, যা পরবর্তী সময়ে হেলেনিস্টিক সংস্কৃতি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।
মৃত্যু এবং উত্তরাধিকার:
৩২৩ খ্রিস্টপূর্বে অ্যালেকজান্ডার অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বাবিলন শহরে মারা যান। তার মৃত্যুর পর তার বিশাল সাম্রাজ্য টুকরো টুকরো হয়ে যায়, কারণ তার কোনো যোগ্য উত্তরাধিকারী ছিল না। তবে তার সাম্রাজ্যের গঠন এবং গ্রীক সংস্কৃতির প্রসার অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর ইতিহাসে বিশাল প্রভাব ফেলে।
অ্যালেকজান্ডারের শাসনকালে তার সামরিক কৌশল, নেতা হিসেবে তার দৃঢ়তা এবং তার অধীনে গড়ে ওঠা বৃহত্তর গ্রীক সাম্রাজ্য তাকে ইতিহাসের অন্যতম মহান নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তার নেতৃত্বের ফলস্বরূপ, হেলেনিস্টিক যুগ গড়ে ওঠে, যা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রীক সংস্কৃতির বিস্তার ঘটায়।
উত্তরাধিকার:
অ্যালেকজান্ডারের মৃত্যু বিশ্ব ইতিহাসে একটি বড় ধাক্কা ছিল। তার মৃত্যুর পর তার সাম্রাজ্য কয়েকটি অংশে ভাগ হয়ে যায়, কিন্তু তার অভিজ্ঞান এবং সামরিক কৌশল আজও ইতিহাসে স্মরণীয়। তার স্মৃতি আজও তার প্রতিষ্ঠিত শহর আলেকজান্দ্রিয়া, এবং তার গ্রীক সংস্কৃতির মাধ্যমে বিশ্বে সুপরিচিত।
What's Your Reaction?






