কাজী নজরুল ইসলাম জীবনী 

কাজী নজরুল ইসলাম জীবনী 

May 24, 2025 - 00:48
 0  2
কাজী নজরুল ইসলাম জীবনী 
বিষয় তথ্য
পূর্ণ নাম কাজী নজরুল ইসলাম
উপাধি/পরিচিতি বিদ্রোহী কবি, জাতীয় কবি (বাংলাদেশ)
জন্ম তারিখ ২৪ মে ১৮৯৯ (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ)
জন্মস্থান চুরুলিয়া, আসানসোল, বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
পিতা কাজী ফকির আহমদ
মাতা জাহেদা খাতুন
শৈশব জীবন দরিদ্রতা ও সংগ্রামে পূর্ণ; মক্তব ও লেটো গানের দলে যুক্ত ছিলেন
শিক্ষা প্রথাগত শিক্ষার পাশাপাশি স্বশিক্ষিত; ফারসি, উর্দু, আরবি শিখেছেন
সামরিক জীবন ১৯১৭-১৯২০; ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী, ৪৯তম বেঙ্গল রেজিমেন্ট
সাহিত্যিক পরিচিতি কবি, গীতিকার, উপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, সুরকার
প্রথম কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণা (১৯২২)
প্রথম বিখ্যাত কবিতা বিদ্রোহী (প্রকাশ: ১৯২২)
সাংবাদিকতা "ধূমকেতু" পত্রিকা সম্পাদনা; ব্রিটিশবিরোধী লেখার জন্য গ্রেফতার
প্রধান সাহিত্যিক থিম বিদ্রোহ, মানবতা, সাম্য, ধর্মীয় সম্প্রীতি, নারীমুক্তি, প্রেম
গানের সংখ্যা (আনুমানিক) ৪,০০০+ (নজরুলগীতি)
ধর্মীয় চিন্তা ইসলাম ও হিন্দু ধর্ম—উভয় সংস্কৃতিতে সমান অবদান
কারাবাস ১৯২৩ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গ্রেফতার
বাংলাদেশে আগমন ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে
জাতীয় স্বীকৃতি বাংলাদেশের জাতীয় কবি (ঘোষিত ১৯৭২)
মৃত্যু ২৯ আগস্ট ১৯৭৬, ঢাকা
সমাধিস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, ভাঙার গান, চক্রবাক, যুগবাণী
উল্লেখযোগ্য গান/ধারা নজরুলগীতি, ইসলামি সংগীত, শ্যামাসঙ্গীত, পল্লীগীতি
বিভাগ গ্রন্থ/কর্ম
কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণা, দোলনচাঁপা, বিষের বাঁশি, ভাঙার গান, চক্রবাক
প্রবন্ধ যুগবাণী, দুর্দিনের যাত্রী, রাজবন্দীর জবানবন্দি
উপন্যাস কুহেলিকা, বদনাম, মৃতুক্ষুধা
গল্পগ্রন্থ রিক্তের বেদি, শিউলি মালা
নাটক ঝিলিমিলি, মৃত্যুক্ষুধা
গান নজরুলগীতি (দেশপ্রেম, প্রেম, ইসলামি সংগীত, পল্লীগীতি)
বছর পুরস্কার/সম্মান প্রদানকারী
১৯৭৪ একুশে পদক বাংলাদেশ সরকার
১৯৭৬ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন বাংলাদেশ সরকার

🔹 প্রারম্ভিক জীবন:

কাজী নজরুল ইসলাম জন্মগ্রহণ করেন ২৪ মে ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দ (১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার অন্তর্গত চুরুলিয়া গ্রামে। তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমদ এবং মাতার নাম জাহেদা খাতুন। পিতার মৃত্যুর পর নজরুলের পরিবার চরম অর্থসংকটে পড়ে, ফলে ছোটবেলা থেকেই তিনি জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে বাধ্য হন। তিনি মক্তবে পড়াশোনার পাশাপাশি মুয়াজ্জিনের কাজ করতেন এবং স্থানীয় লেটো গানের দলে লেখালেখি ও অভিনয়ের কাজ করতেন।


📘 শিক্ষা ও সেনা জীবন (Education and Military Life):

কাজী নজরুল ইসলামের শিক্ষাজীবন ছিল বিচিত্র ও সংগ্রামী। শৈশবে তিনি গ্রামের মক্তবে প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং অল্পবয়সেই মুয়াজ্জিন হিসেবে স্থানীয় মসজিদে কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি দরিদ্রতাজনিত কারণে স্কুলে ভর্তি হলেও নিয়মিত পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। তবে লেটো গানের দলে কাজ করার সুবাদে তিনি বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও নাট্যকলায় গভীরভাবে সম্পৃক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি আসানসোলের শিয়ারসোল রাজ স্কুলে কিছুদিন অধ্যয়ন করেন, যেখানে প্রধান শিক্ষক ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ভ্রাতা রফিকুল ইসলাম। ১৯১৭ সালে নজরুল ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ৪৯তম বেঙ্গল রেজিমেন্টে সৈনিক হিসেবে নিযুক্ত হন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি ভারত ও বার্মায় অবস্থান করেন। সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন তিনি ফার্সি, আরবি ও উর্দু ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন এবং সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রাখেন। সৈনিক জীবনে থাকাকালীন তাঁর লেখালেখির হাত শক্ত হয় এবং সেখান থেকেই তিনি পরবর্তী জীবনে একজন শক্তিশালী কবি ও সাহিত্যিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।


📘 সাহিত্যজীবনের সূচনা (Beginning of Literary Career):

ব্রিটিশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর কাজী নজরুল ইসলাম কলকাতায় বসবাস শুরু করেন এবং সাহিত্য, সাংবাদিকতা ও সংগীতচর্চায় নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত করেন। ১৯১৯ সালের দিকে তিনি সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন এবং তাঁর লেখা প্রথম প্রকাশিত কবিতা "মুক্তি" (১৯১৯) পত্রিকায় ছাপা হয়। এরপর ক্রমেই তিনি প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প ও গান রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯২২ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ "অগ্নিবীণা" বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে যুগান্তকারী প্রভাব ফেলে। এই গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত "বিদ্রোহী" কবিতা তাঁকে "বিদ্রোহী কবি" হিসেবে খ্যাতি এনে দেয়। তাঁর লেখায় বিদ্রোহ, সাম্য, মানবতা, রাজনৈতিক প্রতিবাদ, ধর্মীয় সহনশীলতা ও নারীমুক্তির বার্তা ছিল স্পষ্ট ও শক্তিশালী। একইসঙ্গে তিনি উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধ রচনাও শুরু করেন, যার মধ্যে "বাঁধন হারা", "যুগবাণী", "কুহেলিকা" ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নজরুলের লেখায় প্রথাবিরোধিতা ও সংগ্রামী চেতনা ছিল সুস্পষ্ট, যা তৎকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক নবজাগরণের সূচনা করে। সাহিত্যের পাশাপাশি তিনি বাংলা গানে নতুন মাত্রা সংযোজন করেন এবং সুরকার হিসেবে নজরুলগীতির পথপ্রদর্শক হন।


📘 সম্পাদনা ও সাংবাদিকতা (Editing and Journalism):

কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল তাঁর সম্পাদনা ও সাংবাদিকতামূলক কাজ। তিনি সাংবাদিকতার মাধ্যমে উপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম এবং সামাজিক বিপ্লবের ধারাকে ত্বরান্বিত করেন। ১৯২২ সালে তিনি "ধূমকেতু" নামক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন, যা অল্প সময়ের মধ্যেই ব্রিটিশবিরোধী চেতনাবাহী এক সাহসী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পত্রিকাটিতে তাঁর লেখা সম্পাদকীয় ও কবিতাগুলোতে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পায়। বিশেষ করে তাঁর "আনন্দময়ীর আগমনে" কবিতাটি ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে বিবেচিত হয়, যার কারণে তাঁকে ১৯২৩ সালে গ্রেফতার করা হয় এবং কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। কারাবন্দী অবস্থায়ও তিনি লেখালেখি চালিয়ে যান এবং জেল থেকেই রচনা করেন "রাজবন্দীর জবানবন্দি" নামক ঐতিহাসিক প্রবন্ধ। সাংবাদিক হিসেবে নজরুল শুধু প্রতিবাদী ভাষা ব্যবহার করেননি, বরং তিনি সমাজে সাম্য, মানবতা ও ধর্মীয় সহনশীলতার বার্তাও ছড়িয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি আরও কিছু পত্রিকা ও সাময়িকীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যেমন "লাঙল", "গণবাণী", "নবযুগ" প্রভৃতি। নজরুলের সাংবাদিকতা ছিল তাঁর সাহিত্য ওরাজনৈতিক মতাদর্শের গুরুত্বপূর্ণ সম্প্রসারণ, যা তৎকালীন বাংলায় গণসচেতনতা সৃষ্টিতে অসামান্য ভূমিকা রেখেছে।


📘 সাহিত্যকর্ম (Literary Works):

কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে এক বিপ্লবী অধ্যায়ের সূচনা করেছে। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, গল্পকার, উপন্যাসিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক ও গীতিকার। তাঁর সাহিত্যজীবনের সূচনালগ্নে রচিত "বিদ্রোহী" কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহ ও আত্মমর্যাদার নতুন ধারা সৃষ্টি করে এবং তাঁকে “বিদ্রোহী কবি” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ "অগ্নিবীণা" (১৯২২), যেখানে দেশপ্রেম, প্রতিবাদ ও মানবতার স্পষ্ট উচ্চারণ দেখা যায়। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় "বিষের বাঁশি", "ভাঙার গান", "সঞ্চিতা", "চক্রবাক" সহ বহু কাব্যগ্রন্থ। কবিতা ছাড়াও তিনি লিখেছেন উপন্যাস, যেমন "বাঁধন হারা", "কুহেলিকা", এবং নাটক "আলেয়া", "ঝিলিমিলি" প্রভৃতি। তাঁর প্রবন্ধসংকলন "যুগবাণী", "দুর্দিনের যাত্রী", "রুদ্র মঙ্গল" ইত্যাদিতে সমাজ ও ধর্ম নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ ফুটে উঠেছে। নজরুলের আরেকটি বিশাল অবদান হল সংগীতে—তিনি প্রায় চার হাজার গান রচনা ও সুরারোপ করেন, যা আজ “নজরুলগীতি” নামে খ্যাত। তাঁর গানে ইসলামি ভাবধারা, হিন্দু পুরাণ, প্রেম, প্রকৃতি, দেশপ্রেম এবং বিপ্লব—সব কিছুরই সমন্বয় ঘটে। নজরুলের সাহিত্যকর্ম শুধু সাহিত্যে নয়, সমগ্র জাতির চেতনায় এক শক্তিশালী প্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কাজী নজরুল ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক ব্যতিক্রমধর্মী ও বহুমাত্রিক লেখক। তিনি লিখেছেন:

  • কবিতা ও গান (প্রায় ৪০০০+ গান, যার মধ্যে ইসলামি সংগীত, শ্যামাসঙ্গীত ও দেশপ্রেমের গান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য)

  • উপন্যাস ও গল্প (যেমন: "বাদল প্রভাত", "কুহেলিকা")

  • নাটক ও প্রবন্ধ (যেমন: "যুগবাণী", "দুর্দিনের যাত্রী")

তাঁর রচিত গানগুলো "নজরুলগীতি" নামে পরিচিত এবং আজও বাংলা সংস্কৃতির এক অপরিহার্য অংশ।


📘 ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা (Message of Religious and Communal Harmony):

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অক্লান্ত পথপ্রদর্শক। তিনি মুসলমান হলেও হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ভাবধারা তাঁর সাহিত্য ও সংগীতে গভীরভাবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তাঁর রচনায় যেমন আছে ইসলামি চেতনা—আল্লাহ, নবী, কোরআনের বাণী ও আরব সংস্কৃতির ছাপ, তেমনি বিদ্যমান হিন্দু পুরাণের দেবদেবী, কাব্যিক ভাষা ও উপমা। তিনি লিখেছেন ইসলামি গান যেমন "রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ", আবার তেমনি শ্যামাসঙ্গীতও রচনা করেছেন, যেমন "তোর কালো রূপে মুগ্ধ আমি মা"। নজরুল বিশ্বাস করতেন—"ধর্ম নয়, মানুষ বড়"। তিনি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় বিভাজন এবং কূপমণ্ডূকতার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাঁর লেখায় স্পষ্ট বার্তা—মানবতা, প্রেম ও সাম্যের মূলে কোনো জাত, ধর্ম, বর্ণের বিভেদ থাকতে পারে না। ১৯২০ ও ৩০-এর দশকে যখন ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব প্রকট হচ্ছিল, তখন নজরুল লিখেছেন: "মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম, হিন্দু-মুসলমান।" এই ঐকতানমূলক দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁকে বাংলা সাহিত্যের সর্বজনগ্রাহ্য মানবতাবাদী কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাঁর সাহিত্য ও সংগীতে ধর্মীয় সম্প্রীতির এই শক্তিশালী বার্তা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক ও অনুপ্রেরণাদায়ক।

নজরুল ছিলেন হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির জোরালো পক্ষপাতী। তাঁর লেখায় উভয় ধর্মীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও গভীর মানবিকতা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি ধর্মের নামে বৈষম্য, কুসংস্কার ও সহিংসতার বিরুদ্ধে ছিলেন।


📘 স্বাধীন বাংলাদেশ ও জাতীয় কবির স্বীকৃতি:

বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর কাজী নজরুল ইসলামকে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জাতীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৭২ সালের মে মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত আহ্বানে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে নজরুল ইসলাম ও তাঁর পরিবারকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ওই সময় তিনি অসুস্থ ও বাকরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। তাঁকে রাজধানী ঢাকায় বিশেষভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হয় এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে “জাতীয় কবি” হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণা কেবল এক প্রথিতযশা কবির প্রতি রাষ্ট্রের কৃতজ্ঞতা নয়, বরং স্বাধীন বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও সংগ্রামী চেতনার প্রতীক হিসেবে নজরুলকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। পরবর্তীতে নজরুলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করা হয় এবং তাঁকে ঢাকার কেন্দ্রীয় একটি সরকারি বাসভবনে রাষ্ট্রীয়ভাবে আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট এই মহান কবি মৃত্যুবরণ করেন এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। তাঁর স্বীকৃতি শুধু রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সীমাবদ্ধ নয়—বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর চেতনা ও কণ্ঠস্বর আজও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে রয়েছে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর গান ও কবিতা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করে।

তাঁর মৃত্যু হয় ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে, এবং তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়।


🔹 উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ:

কবিতা:

  • অগ্নিবীণা (১৯২২)

  • দোলনচাঁপা (১৯২৩)

  • বিষের বাঁশি (১৯২৪)

  • ভাঙার গান (১৯২৪)

  • চক্রবাক (১৯২৫)

উপন্যাস:

  • কুহেলিকা

  • বদনাম

  • মৃতুক্ষুধা

প্রবন্ধ:

  • যুগবাণী

  • দুর্দিনের যাত্রী

গান:

  • নজরুলগীতি (দেশপ্রেম, প্রেম, ইসলামি সংগীত, শ্যামাসঙ্গীত, পল্লীগীতি)


উপসংহার:

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক অনন্য শক্তি। তাঁর সাহিত্য শুধু কাব্যের নান্দনিকতা নয়, বরং একটি স্বাধীন, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজের স্বপ্ন নির্মাণে সহায়ক। তিনি কেবল একজন কবিই নন, ছিলেন এক অগ্নিসংহত মানবতার কণ্ঠস্বর, যিনি নির্ভয়ে বলেছিলেন—

"মোরা একই বৃন্তে দুইটি কুসুম, হিন্দু-মুসলমান।"

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও জাতীয় পরিচয়ে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য, চিরভাস্বর।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0