মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭তম রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনের জীবনী
রিচার্ড নিক্সন,জীবনী

পূর্ণ নাম | রিচার্ড মিলহাউস নিক্সন |
জন্ম | ৯ জানুয়ারি, ১৯১৩ |
জন্মস্থান | ইয়োরবা লিন্ডা, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র |
মৃত্যু | ২২ এপ্রিল, ১৯৯৪ (৮১ বছর বয়সে) |
পিতা | ফ্রেডরিক নিক্সন |
মাতা | হান্নাহ মিলহাউস নিক্সন |
পেশা | রাজনীতিক, আইনজীবী |
দাম্পত্য জীবন | প্যাট নিক্সন (১৯৪০–১৯৯৪) |
সন্তান | ট্রি, এডওয়ার্ড |
ধর্ম | ক্যালভিনিস্ট |
পদবী | ৩৭তম প্রেসিডেন্ট (১৯৬৯–১৯৭৪), ৩৪তম উপ-প্রেসিডেন্ট (১৯৫৩–১৯৬১) |
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
রিচার্ড নিক্সন ১৯১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ার ইয়োরবা লিন্ডা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলাম চার ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তার পরিবার ছিল গরীব, এবং তার পিতা মাতা খৃস্টান ধর্মাবলম্বী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই নিক্সন পড়াশোনায় আগ্রহী ছিলেন এবং স্কুলে সে সময়ে ভালো ফলাফল অর্জন করতেন। তিনি **ক্যালিফোর্নিয়া কলেজে** পড়াশোনা করেন, পরে **ডিউক ইউনিভার্সিটি** থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার
নিক্সন ১৯৩৭ সালে আইন পেশায় প্রবেশ করেন। তিনি শিকাগোতে আইন ব্যবসা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৪০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ভার্নন সিটি থেকে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার কার্যক্ষমতা এবং দক্ষতার কারণে দ্রুতই তিনি একটি নাম কামান।
রাজনৈতিক ক্যারিয়ার
১৯৪৭-১৯৫০: কংগ্রেসম্যান
নিক্সন তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন ১৯৪৭ সালে, যখন তিনি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। কংগ্রেসে তার কর্মজীবন শুরু হয় এবং তিনি জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৫০-১৯৫৩: সেনেটর
নিক্সন ১৯৫০ সালে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে নির্বাচিত হন এবং ১৯৫৩ পর্যন্ত সেখানকার সদস্য ছিলেন। তার অন্যতম উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ছিল, **কমিউনিজম বিরোধী** অবস্থান নেওয়া। তিনি ১৯৫০ সালে **রেড স্কেয়ার** এবং কমিউনিজম বিরোধী আন্দোলনের নেতা হিসেবে পরিচিতি পান।
১৯৫৩-১৯৬১: উপ-প্রেসিডেন্ট
১৯৫২ সালে, তিনি ড्वাইট ডি. আইজেনহাওয়ারের সঙ্গে রিপাবলিকান পার্টি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের **উপ-প্রেসিডেন্ট** হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৩ থেকে ১৯৬১ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তার শাসনকালে, তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক নীতি গঠন এবং **কোরিয়া যুদ্ধ** শেষে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কাজ করেন।
১৯৬০: প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
১৯৬০ সালে, নিক্সন রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জন এফ. কেনেডি, যিনি ওই নির্বাচনে জয়ী হন। নিক্সনকে নির্বাচনে হেরে যেতে হলেও, তার রাজনৈতিক প্রভাব কমে যায়নি।
১৯৬৮: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়
নিক্সন ১৯৬৮ সালে পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়লাভ করেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হুবার্ট হ্যামফ্রি। ১৯৬৯ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের **৩৭তম প্রেসিডেন্ট** হিসেবে শপথ নেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিক্সনের শাসন
১. ভিয়েতনাম যুদ্ধ:
নিক্সন ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় মার্কিন সেনা কমানোর জন্য "ভিয়েতনামাইজেশন" নীতি গ্রহণ করেন, যার মাধ্যমে দক্ষিণ ভিয়েতনামের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত করা হয় এবং মার্কিন সেনা সংখ্যা কমানো হয়। ১৯৭৩ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে পুরোপুরি বের হয়ে যায়।
২. ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি:
নিক্সনের শাসনকাল ১৯৭২ সালের ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি দিয়ে কালো হয়ে ওঠে। ১৯৭২ সালে, রিপাবলিকান দলের লোকেরা ওয়াটারগেট ভবনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নির্বাচনী সদর দফতর হ্যাক করতে গিয়ে ধরা পড়ে। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে যে, নিক্সন প্রশাসন এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। তদন্তের চাপের মধ্যে ১৯৭৪ সালে, নিক্সন অবশেষে **প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ** করেন। তিনি একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি পদত্যাগ করেছেন।
৩. বিদেশনীতি:
নিক্সন তার প্রেসিডেন্ট পদে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ করেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল চীন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন। ১৯৭২ সালে, নিক্সন চীন সফর করেন, যা চীন-আমেরিকা সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করে। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি **SALT I** স্বাক্ষর করেন।
পদত্যাগ এবং পরবর্তী জীবন
১৯৭৪ সালের ৯ আগস্ট, ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি তদন্তের কারণে প্রেসিডেন্ট নিক্সন পদত্যাগ করেন। তার পরে, জেরাল্ড ফোর্ড তাকে ক্ষমা করে দেন, যার কারণে নিক্সনকে বিচারিকভাবে দায়মুক্তি দেওয়া হয়।
পদত্যাগের পর নিক্সন তার জীবনের বাকি সময় লেখক ও বক্তা হিসেবে কাজ করেন। তিনি বেশ কয়েকটি বই লেখেন, যার মধ্যে “**নিক্সন ক্রনিকলস**” (১৯৭৮) এবং “**এমপ্যাথি ফর দ্য ডেভিল**” উল্লেখযোগ্য। নিক্সন নানা বিষয় নিয়ে লিখে তার রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন।
মৃত্যু এবং উত্তরাধিকার
নিক্সন ১৯৯৪ সালের ২২ এপ্রিল নিউইয়র্কে মারা যান। তার মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল, বিশেষত ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির কারণে তার শাসনকাল কখনোই সম্পূর্ণভাবে সফল হিসাবে বিবেচিত হয়নি, তবে তার কিছু রাজনৈতিক অবদান আজও স্মরণীয়।
নিক্সনের জীবনে অনেক উত্থান-পতন ছিল, তবে তার রাজনৈতিক কৌশল এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার অবদান অবিস্মরণীয়।
What's Your Reaction?






