শচীন রমেশ তেন্ডুলকার এর জীবনী
শচীন রমেশ তেন্ডুলকার এর জীবনী

শচীন রমেশ তেন্ডুলকার এর জীবনী
নাম: শচীন রমেশ তেন্ডুলকার
জন্ম তারিখ: ২৪ এপ্রিল, ১৯৭৩
জন্মস্থান: মুম্বই, মহারাষ্ট্র, ভারত
বাবার নাম: রমেশ তেন্ডুলকার (মারাঠি লেখক এবং শিক্ষাবিদ)
মায়ের নাম: রাজনী তেন্ডুলকার (বীমা সংস্থার কর্মী)
---
পরিবার:
পিতা: শচীনের পিতার নাম রমেশ তেন্ডুলকার। তিনি একজন মারাঠি লেখক এবং শিক্ষাবিদ ছিলেন। শচীনের পিতা ছিলেন অত্যন্ত স্নেহশীল এবং তার প্রতি গভীর আগ্রহ ও সমর্থন প্রদান করতেন।
মাতা: শচীনের মায়ের নাম রাজনী তেন্ডুলকার। তিনি একটি বীমা সংস্থায় কর্মরত ছিলেন এবং শচীনের শৈশব জীবনে তার মা অত্যন্ত সহায়ক ছিলেন।
ভাই: শচীনের ছোট ভাই অজিত তেন্ডুলকার। অজিতও শচীনের একজন বড় প্রেরণাদাতা ছিলেন এবং তিনি তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে তাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন।
শৈশব ও শিক্ষা জীবন: শচীন তেন্ডুলকারের শৈশব কাটে মুম্বইয়ের ছোট্ট এক গলিতে। তিনি ছোট থেকেই ক্রিকেটের প্রতি গভীর আকর্ষণ অনুভব করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা: শচীন তার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন Indian Education Society’s New English School, Bandra থেকে।
উচ্চ শিক্ষা: পরবর্তীতে, তিনি Sharadashram Vidyamandir School থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।
ক্রিকেটে আগ্রহ: শচীনের ক্রিকেটে আগ্রহের শুরু তার স্কুল জীবন থেকেই। তিনি শৈশবেই ক্রিকেট খেলতে শুরু করেছিলেন এবং তার বিদ্যালয়ের কোচ রামাকান্ত আচারেকর তাকে প্রথম ক্রিকেট কোচিং দিতে শুরু করেন। আচারেকর ছিলেন শচীনের জীবনের অন্যতম বড় প্রভাবক।
---
পরিবারের ভূমিকা: শচীন যখন ছোট ছিলেন, তখন তার পরিবার তার ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ এবং প্রতিভা বুঝতে পেরেছিল। তার ভাই অজিত তেন্ডুলকার তাকে প্রথম থেকেই উৎসাহিত করতেন এবং তার কোচিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তার বাবা রমেশ তেন্ডুলকারও শচীনের ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে সমর্থন ও উৎসাহ জুগিয়েছিলেন, যাতে সে তার লক্ষ্য অর্জনে সফল হতে পারে।
প্রথম ক্রিকেট কোচিং: শচীনের প্রথম ক্রিকেট কোচ ছিলেন রামাকান্ত আচারেকর, যিনি তাকে কঠোর পরিশ্রম এবং দৃঢ় মনোবল শেখান। আচারেকরের অধীনে শচীন ক্রিকেটের মৌলিক ভিত্তি শিখে আরও ভালো খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে উঠেন।
---
এই ছিল শচীন তেন্ডুলকারের পরিচয়, পরিবারের তথ্য এবং শিক্ষাগত জীবনের বিস্তারিত বর্ণনা। এটি শচীনের জীবনযাত্রার একটি সুন্দর সূচনা, যা তার পরবর্তী ক্রিকেট ক্যারিয়ার এবং অর্জনের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
শচীন রমেশ তেন্ডুলকার, যাকে ক্রিকেটবিশ্বের অনেকেই "ক্রিকেটের ঈশ্বর" হিসেবে জানেন, তিনি শুধু একটি নাম নয়, একটি প্রেরণা। তার ব্যাটের ছোঁয়ায় বিশ্ব ক্রিকেটে অগণিত রেকর্ড তৈরি হয়েছে, যা আজও অক্ষুণ্ণ। শচীন তেন্ডুলকারের জীবনে অনেক গল্প, সংগ্রাম এবং সফলতার পেছনে একটিই মূল কথা—অপরিসীম পরিশ্রম ও নিষ্ঠা। এই বায়োগ্রাফি শচীনের জীবন, তার শিক্ষাগত পটভূমি, প্রথম ম্যাচ থেকে অবসর এবং তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে একটি পূ
শৈশব: শচীনের শৈশব ছিল মুম্বইয়ের ছোট্ট একটি এলাকাতে। ছোটবেলা থেকেই তার ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ ছিল অসীম। তবে তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব শক্তিশালী ছিল না, তাই শচীন এবং তার পরিবার পরিশ্রমী হয়ে উঠতে বাধ্য হয়েছিল।
---
শিক্ষা জীবন
শচীন তার প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন মুম্বইয়ের নিউ ইংলিশ স্কুল, বান্দ্রা থেকে। এখানে তার প্রথম কোচিং শুরু হয়।
পরবর্তীতে, তিনি শারদাশ্রম বিদ্যামন্দির হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।
শচীনের স্কুল জীবনে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ খুবই তীব্র ছিল। তার শিক্ষকদের মতে, তিনি ছিল একটি উদাহরণ, যিনি অল্প বয়সেই বড় লক্ষ্য স্থির করে সে পথে হাঁটতে শুরু করেছিলেন।
---
ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু
প্রথম কোচ: শচীনের প্রথম ক্রিকেট কোচ ছিলেন রামাকান্ত আচারেকর, যিনি তাকে আধুনিক ক্রিকেট শিখিয়েছিলেন এবং তার প্রতিভা নজরে এনে দেন। আচারেকরই ছিলেন শচীনের সবচেয়ে বড় গুরুর মধ্যে একজন।
প্রথম শ্রেণির অভিষেক: ১৯৮৮ সালে শচীন তেন্ডুলকার মুম্বইয়ের হয়ে গুজরাটের বিপক্ষে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক করেন।
আন্তর্জাতিক অভিষেক
ওডিআই: ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পোর্ট এলিজাবেথে তার প্রথম আন্তর্জাতিক ওডিআই ম্যাচটি খেলেন।
টেস্ট: ১৫ নভেম্বর, ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে করাচিতে তার প্রথম টেস্ট অভিষেক ঘটে।
---
রেকর্ডসমূহ ও সাফল্য
টেস্ট ম্যাচে রান: শচীন টেন্ডুলকার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০টি শতরান করেছেন (৫১টি টেস্ট এবং ৪৯টি ওয়ানডে) এবং ৩৪,৩৫৭ রান সংগ্রহ করেছেন।
বিশ্বকাপ জয়: ২০১১ সালে শচীন তেন্ডুলকার ভারতের বিশ্বকাপ জয়ী দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।
২০০ রান: ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শচীন বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওডিআই ম্যাচে ২০০ রান করেছেন।
অবসর: ২০১৩ সালের ১৬ নভেম্বর, শচীন তার শেষ টেস্ট ম্যাচটি খেলেন। তিনি ২৪ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ার শেষে ক্রিকেটকে বিদায় জানান।
---
ব্যক্তিগত জীবন
বিবাহ: ১৯৯৫ সালে শচীন তার স্কুল জীবনের বন্ধু ডা. অঞ্জলি মেহতাকে বিয়ে করেন। অঞ্জলি ছিলেন একজন চিকিৎসক।
সন্তান: শচীনের দুই সন্তান রয়েছে, একটি কন্যা সারাহ এবং এক পুত্র অর্জুন। অর্জুন তেন্ডুলকারও ক্রিকেটে আগ্রহী এবং মুম্বইয়ের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছেন।
বর্তমান জীবন: শচীন বর্তমানে মুম্বইয়ের বান্দ্রাতে তার পরিবারের সঙ্গে থাকেন এবং বিভিন্ন সমাজসেবা, ব্যবসা এবং ক্রিকেট উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে অংশ নেন।
ব্যবসায়িক প্রাপ্তি
ক্রিকেটে তেন্ডুলকরের অবদানকে পুঁজি করে তার অসম্ভব জনপ্রিয়তার দরুন অতীতের যেকোন বাণিজ্যিক চুক্তিকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় যখন তিনি ১৯৯৫ সালে ওয়ার্ল্ডটেলের সাথে ₹ ৩০ কোটি (ইউএস$ ৩.৬৭ মিলিয়ন) চুক্তিবদ্ধ হন।[১৪৪] পরবর্তীতে ২০০১ সালে আবারো ৫ বছরের জন্য নবায়ণ করেন ₹ ৮০ কোটি (ইউএস$ ৯.৭৮ মিলিয়ন)র বিনিময়ে।[১৪৫]
২০০৬ সালে সাচি এন্ড সাচি’র সাথে ₹ ১৮০ কোটি (ইউএস$ ২২ মিলিয়ন) তিন বছর মেয়াদী চুক্তি করেন।[১৪৬] তেন্ডুলকর তার জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করে দু’টি রেস্টুরেন্ট হিসেবে - তেন্ডুলকর’স,[১৪৭] কোলাবা, মুম্বই এবং শচীন’স,[১৪৮] মুলুন্দ, মুম্বাই চালু করেন। মার্স রেস্টুরেন্টের মালিক সঞ্জয় নারাং এর সাথে উক্ত রেস্টুরেন্টগুলো যৌথভাবে পরিচালিত করছেন। এছাড়াও, তিনি ব্যাঙ্গালোরে শচীন’স নামে নতুন একটি রেস্তোরাঁ চালু করবেন। ২০০৭ সালে শচীন ফিউচার গ্রুপ এবং মানিপাল গ্রুপের সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চার গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে স্বাস্থ্যসেবা এবং খেলাধূলায় শারীরিক সক্ষমতার লক্ষ্যে ‘এস ড্রাইভ এণ্ড সাচ’ নামক পণ্য উৎপাদনে আসার ঘোষণা করে।[১৪৯] ভার্জিন কমিকের পরিবেশনায় শচীনকে মহাবীর প্রদর্শন করে কমিক বই প্রকাশের পরিকল্পনা নিয়েছে।
পুরস্কার ও সম্মাননা
পদ্মশ্রী (২০০৯): ভারত সরকারের পক্ষ থেকে শচীনকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।
পদ্মভূষণ (২০১০): ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণ তার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ভারত রত্ন (২০১৪): শচীন তেন্ডুলকার হলেন প্রথম ক্রিকেটার, যাকে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার "ভারত রত্ন" প্রদান করা হয়।
ICC Hall of Fame: ২০১৯ সালে শচীন তেন্ডুলকারকে ICC Cricket Hall of Fame-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
---
অবসর পরবর্তী জীবন
রাজনীতি ও সমাজসেবা: ২০১২ সালে তিনি রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে মনোনীত হন এবং শিশুস্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সামাজিক উন্নয়নে কাজ করছেন।
স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট: শচীন প্রতিষ্ঠা করেছেন Sachin Ramesh Tendulkar Sports Management কোম্পানি এবং তিনি Kerala Blasters FC (Indian Super League) এর সহ-মালিক।
কমেন্টেটর: ২০১৯ সালে তিনি ICC Cricket World Cup-এর সময় প্রথমবারের মতো ক্রিকেট কমেন্টেটর হিসেবে অভিষেক করেন।
---
উপসংহার
শচীন তেন্ডুলকার শুধুমাত্র একজন খেলা-পাগল ক্রিকেটার নন, তিনি একটি যুগের প্রতিনিধি। তাঁর পরিশ্রম, সততা এবং সংগ্রামের গল্প হাজারো তরুণ ক্রিকেটারের জন্য একটি মডেল। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়, কোনো কিছু করতে গেলে ত্যাগ, কঠোর পরিশ্রম এবং বিশ্বাস অপরিহার্য। শচীন তেন্ডুলকারের আত্মবিশ্বাসী মনোভাব, ক্রীড়ার প্রতি প্রেম এবং অবিচলিত লক্ষ্য তাকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটার করে তুলেছে।
আজও তিনি কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন, এবং তিনি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন। শচীনের জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আমাদের শিখিয়ে দেয় যে, কখনো থামো না, যেকোনো লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সংগ্রাম করতে ।
What's Your Reaction?






