লিওনেল মেসির জীবনী | Biography of Lionel Messi in Bengali
লিওনেল মেসি, যার নাম শুনলেই মনে পড়ে যায় জাদুকরী ড্রিবলিং, চমৎকার গোল এবং নিখুঁত পাসের গল্প। তিনি শুধু আর্জেন্টিনার নয়, বরং সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ের মুকুটহীন রাজা ছিলেন বহু বছর। বর্তমানে তিনি বিশ্বকাপজয়ী, ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যালন ডি’অরজয়ী এবং সবচেয়ে ধারাবাহিক পারফরমার হিসেবে ফুটবলের এক অবিচ্ছেদ্য নাম।

বিষয় | তথ্য |
---|---|
পুরো নাম | লিওনেল আন্দ্রেস মেসি কুচ্চিত্তিনি |
ডাকনাম | লিও, লা পুলগা (The Flea), গোট (GOAT) |
জন্মতারিখ | ২৪ জুন ১৯৮৭ |
জন্মস্থান | রোজারিও, সান্তা ফে, আর্জেন্টিনা |
পিতার নাম | জর্জ মেসি (ফ্যাক্টরি ম্যানেজার) |
মাতার নাম | সেলিয়া কুচ্চিত্তিনি (পরিষ্কারক কর্মী) |
স্ত্রী | আন্তোনেলা রোকুজ্জো |
সন্তানের সংখ্যা | ৩ জন ছেলে — থিয়াগো, মাতেও, সিরো |
উচ্চতা | ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি (১.৭০ মিটার) |
খেলার পজিশন | ফরোয়ার্ড / অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার |
বর্তমান ক্লাব | ইন্টার মায়ামি (মেজর লিগ সকার, USA) |
জাতীয় দল | আর্জেন্টিনা |
পেশাগত অভিষেক | ২০০৪ সালে, বার্সেলোনা |
পুরস্কার | ৮ বার ব্যালন ডি’অর, বিশ্বকাপ (২০২২), কোপা আমেরিকা (২০২১), অলিম্পিক সোনা, ক্লাব বিশ্বকাপসহ অসংখ্য |
বেতন (আনুমানিক) | $৪৫ মিলিয়ন প্রতি বছর (ইন্টার মায়ামি) |
শৈশব ও ছোটবেলা
লিওনেল মেসি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে। ছোটবেলা থেকেই ফুটবল ছিল তার ধ্যানজ্ঞান। মাত্র ১১ বছর বয়সে জানা যায়, তিনি Growth Hormone Deficiency (GHD) নামক একটি হরমোনজনিত সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু তার ফুটবল প্রতিভা এতটাই অসাধারণ ছিল যে, এফসি বার্সেলোনা তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ বহনের শর্তে তাকে সাইন করে নেয়।
বার্সেলোনায় পেশাগত ক্যারিয়ার
মেসি ২০০৪ সালে বার্সেলোনার মূল দলে অভিষেক করেন। এরপর ১৭ বছর বার্সেলোনার হয়ে তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেন:
-
৭৭৮ ম্যাচে ৬৭২ গোল — ক্লাব ইতিহাসের সর্বোচ্চ
-
১০টি লা লিগা শিরোপা
-
৪টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা
-
৭টি কোপা দেল রে
-
অসংখ্য ক্লাব পুরস্কার এবং রেকর্ড
মেসির ও বার্সেলোনার সম্পর্ক যেন ছিল হৃদয়ের বাঁধনে বাঁধা।
🇦🇷 আর্জেন্টিনার হয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার
দীর্ঘদিন ধরে অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মেসিকে জাতীয় দলের হয়ে বড় শিরোপা না জেতার কারণে। কিন্তু তিনি সব সমালোচনার জবাব দিয়েছেন:
-
২০২১ সালে কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন — দীর্ঘ ২৮ বছরের শিরোপাহীনতার অবসান
-
২০২২ সালে ফিফা বিশ্বকাপ জয় — গোল্ডেন বল জয় সহ
-
অলিম্পিক গোল্ড (২০০৮)
-
অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ (২০০৫)
-
সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলদাতা (পুরুষ বিভাগে ১০০+ গোল)
ব্যক্তিগত অর্জন
-
৮ বার Ballon d'Or (ইতিহাসে সর্বোচ্চ)
-
৬ বার Golden Boot (ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতা)
-
FIFA The Best Men's Player
-
UEFA Player of the Year
-
সর্বাধিক গোলদাতা, অ্যাসিস্ট প্রদানকারী ও ম্যাচ অফ দ্য ম্যাচ পারফরমার
পিএসজি এবং ইন্টার মায়ামি যাত্রা
২০২১ সালে বার্সেলোনার আর্থিক সমস্যার কারণে মেসি পিএসজিতে (ফ্রান্স) যোগ দেন। দুই মৌসুম খেলেন এবং লিগ ওয়ান শিরোপা জেতেন।
২০২৩ সালে তিনি ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর একটি মুখ্য চালক হয়ে ওঠেন।
ব্যক্তিগত জীবন ও দানশীলতা
মেসি ৩ সন্তানের জনক এবং স্ত্রী আন্তোনেলার সাথে দীর্ঘদিনের প্রেমকে পরিণয়ে রূপ দেন ২০১৭ সালে। তিনি একজন পরিবারকেন্দ্রিক মানুষ। মেসি ফাউন্ডেশন ও UNICEF-এর মাধ্যমে দান এবং মানবিক সহায়তায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।
“GOAT” বিতর্ক ও উত্তরাধিকার
মেসিকে অনেকেই “Greatest Of All Time (GOAT)” হিসেবে উল্লেখ করেন। পেলে, ম্যারাডোনা কিংবা রোনালদোর সাথে তার তুলনা হয় ঠিকই, কিন্তু তিনি নিজের যোগ্যতাতেই ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন।
উপসংহার
লিওনেল মেসির জীবন এক গভীর অনুপ্রেরণার গল্প। ছোটবেলার শারীরিক দুর্বলতা থেকে উঠে এসে বিশ্বজয়ী ফুটবল সম্রাট হয়ে ওঠার পেছনে আছে তার পরিশ্রম, ধৈর্য, বিনয় আর দক্ষতার এক অনন্য উদাহরণ। তিনি শুধুমাত্র ফুটবলের নয়, বরং সমগ্র মানবতার এক উদাহরণ হয়ে থাকবেন চিরকাল।
What's Your Reaction?






