উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম-জং-উন এর জীবনী
কিম জং-উন, জীবনী

বিষয় | বিবরণ |
---|---|
পূর্ণ নাম | কিম জং-উন |
জন্ম | ১৯৮৪ অথবা ১৯৮৩ সালের ৮ জানুয়ারি, পিয়ংইয়ং, উত্তর কোরিয়া |
পিতামাতা | কিম জং-ইল (পিতা), কিম ইয়ং-হু (মাতা) |
দাম্পত্য জীবন | রি সোল-জু (বিবাহিত) |
সন্তান | এক বা একাধিক সন্তান (যদিও তাদের নাম বা পরিচিতি প্রকাশ পায়নি) |
শিক্ষা | সুইজারল্যান্ডের লুজার্ন শহরের একটি স্কুলে পড়াশোনা (যদিও বিস্তারিত তথ্য কম) |
পেশা | রাষ্ট্রপ্রধান, সামরিক নেতা, রাজনীতিবিদ |
দল | কোরিয়ান ওয়ার্কার্স পার্টি |
পদ | উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা (২০১১ সাল থেকে বর্তমান) |
শৈশব ও শিক্ষা: কিম জং-উন ১৯৮৪ অথবা ১৯৮৩ সালের ৮ জানুয়ারি পিয়ংইয়ং, উত্তর কোরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা কিম জং-ইল ছিলেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা, এবং তার দাদা কিম ইল-সাং ছিলেন উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম নেতা। কিম জং-উনের শৈশব ছিল একান্তভাবে পরিবারিক দৃষ্টিকোণ থেকে গোপনীয় এবং নিরাপত্তার মধ্যে।
কিম জং-উন প্রাথমিকভাবে সুইজারল্যান্ডের লুজার্ন শহরের একটি স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। সেখানে তার পরিচয় গোপন রাখা হয়েছিল, এবং তিনি নিজেকে "ওসাকা" নামে পরিচিত করেছিলেন। স্কুলে তার কর্মক্ষমতা খুবই ভালো ছিল এবং তিনি পশ্চিমা সাংস্কৃতিক প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।
সামরিক ও রাজনৈতিক জীবন: কিম জং-উনের উত্তর কোরিয়ার শাসনশক্তি গ্রহণের পথটি ছিল একাধিক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে। তার পিতা কিম জং-ইল ২০১১ সালে মৃত্যুবরণ করার পর, কিম জং-উন তার পিতার উত্তরসূরি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন, যদিও সে সময়ে তার বয়স ছিল মাত্র ২৭ বছর। তাকে উত্তর কোরিয়ার শাসক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এবং সামরিক শক্তিগুলি একত্রিত হয়ে তাকে সমর্থন জানিয়েছিল।
কিম জং-উন উত্তর কোরিয়ার শাসনক্ষমতা গ্রহণের পর, তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন যেমন:
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষা ব্যবহার: কিম জং-উন তার প্রথম পদক্ষেপে দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা তৈরি করেন, বিশেষ করে পারমাণবিক পরীক্ষা এবং ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে।
- পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা: কিম জং-উন উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি জোরদার করতে থাকেন, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
- দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা: ২০১৮ সালে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন এর সাথে একটি ঐতিহাসিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সই করা হয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: কিম জং-উন প্রথম দিককার সময়ে কঠোর পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণ করলেও, ২০১৮ সালে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একাধিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সেই সম্মেলনগুলোতে তিনি পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আলোচনার সম্ভাবনা খোলেন। যদিও এসব আলোচনার সাফল্য সীমিত ছিল, কিন্তু কিমের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা পরিবর্তিত হয়।
অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন: কিম জং-উন তার শাসনকালে দেশে উন্নয়নশীল অবকাঠামো এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং-এ ব্যাপক আধুনিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন, যদিও উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি এখনও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে খুবই দুর্বল।
পরিবার: কিম জং-উন ২০১০ সালের দিকে তার স্ত্রী রি সোল-জুর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এক বা একাধিক সন্তান রয়েছে, যদিও সেসব বিষয়ে অনেক তথ্য গোপন রাখা হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার শাসক পরিবার কখনোই তার পরিবারের সদস্যদের পরিচিতি বা অবস্থান প্রকাশ করে না।
উপসংহার: কিম জং-উন একদিকে যেমন উত্তর কোরিয়ার শাসক হিসেবে শক্তিশালী প্রভাবশালী নেতা, তেমনি তিনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অনেক সময় বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। তার শাসনামলে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক কাঠামো অনেকটা তার পিতার সময়ের মতোই বজায় থাকে, তবে কিছু পরিবর্তনও আনা হয়েছে। পারমাণবিক শক্তির প্রশ্ন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিবর্তন কিম জং-উন এর শাসনকালকে একেবারে বিশেষ করে তুলেছে।
What's Your Reaction?






