আন্দ্রে জ্যাকসন এর জিবনী
আন্দ্রে জ্যাকসন,জিবনী

আন্দ্রে জ্যাকসন (Andrew Jackson) ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭ম প্রেসিডেন্ট, যিনি ১৮২৯ থেকে ১৮৩৭ সাল পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি আমেরিকার রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী চরিত্র, যিনি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজের বহু দিক পরিবর্তন করেছিলেন। তাঁর জীবন ও নেতৃত্বের গল্প অত্যন্ত চমকপ্রদ ও বিতর্কিত, বিশেষত তাঁর নেতৃত্বের সময়কালে বিভিন্ন নীতি ও সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল।
জন্ম পরিচয়:
- পুরো নাম: আন্দ্রে জ্যাকসন
- জন্ম তারিখ: ১৫ মার্চ, ১৭৬৭
- জন্মস্থান: পিন্কনি, দক্ষিণ ক্যারোলিনা (বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্র)
- পিতামাতা: তার পিতা, অ্যাডাম জ্যাকসন, একজন স্কটিশ-আমেরিকান অভিবাসী ছিলেন, এবং তার মা ছিলেন এলিজাবেথ হেনরি। জ্যাকসনের পরিবার ছিল দরিদ্র এবং তার বাবা শিশুকালে মারা যান, ফলে তার মা তাকে এবং তার ভাইকে একা লালন-পালন করতেন।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
আন্দ্রে জ্যাকসন ১৭৬৭ সালের ১৫ মার্চ, সাউথ ক্যারোলিনার, ওয়াটসন কাউন্টিতে একটি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন শ্রমিক, যিনি জন্মের কয়েক সপ্তাহ পরে মারা যান। তাঁর মা, এলিজাবেথ, তাঁকে বড় করেন এবং তাঁর জীবনের প্রথম শিক্ষা দেন। ১৮ বছর বয়সে, তিনি আমেরিকার যুদ্ধের প্রথম দিকে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যা তাঁকে দ্রুত একজন সাহসী যোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি এনে দেয়।
তরুণ বয়সে আইনজীবী হিসেবে ক্যারিয়ার
জ্যাকসন ১৭৮৭ সালে টেনেসি অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন এবং ১৭৮৮ সালে আইন অধ্যয়ন শুরু করেন। খুব তাড়াতাড়ি তিনি একটি সফল আইনজীবী ও ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং দ্রুত রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৮০৩ সালে, জ্যাকসন টেনেসি এলাকার প্রথম কৃষি জেলা আদালতের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন।
মিলিটারি ক্যারিয়ার ও "হিরো" খেতাব
জ্যাকসন ১৮১২ সালের যুদ্ধের সময় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। বিশেষত, ১৮১৫ সালে নিউ অরলিন্সের যুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে আমেরিকান সেনারা ব্রিটিশ বাহিনীকে পরাস্ত করে। এই যুদ্ধ তাঁকে একজন জাতীয় নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং "Old Hickory" (পুরনো হিকরি) নামে পরিচিতি লাভ করেন। এই জয় তাকে জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
রাজনীতিতে প্রবেশ
১৮২৪ সালে, জ্যাকসন প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। যদিও তিনি জনপ্রিয় ভোটে জয়ী হন, তবে ইলেকটোরাল ভোটে তিনি পরাজিত হন এবং জন কুইন্সি অ্যাডামসকে নির্বাচিত হতে দেন। এই নির্বাচনে তাঁর পরাজয়কে তিনি "ডিজনড ডিল" (corrupt bargain) বলে দাবি করেন, যা তাঁর রাজনৈতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। ১৮২৮ সালে, তিনি দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং বড় ব্যবধানে জয়ী হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে
জ্যাকসনের প্রেসিডেন্ট পদে আসা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। তাঁর শাসনকালে, তিনি জনসাধারণের মধ্যে "জনপ্রিয়তা" এবং "গণতন্ত্র" প্রচারের মাধ্যমে নতুন ধরনের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি "টেনেসি স্টাইল" রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেখানে সাধারণ জনগণের মতামত ও সমর্থন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
১. তাঁর জনপ্রিয়তা ও নেতৃত্বের নীতি
জ্যাকসন জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্টা চালান এবং আধুনিক রাজনৈতিক দলের ভিত্তি স্থাপন করেন। তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন এবং গঠনের জন্য এক নতুন রাজনৈতিক শিবির সৃষ্টি করেন, যা পরে "ডেমোক্র্যাটিক পার্টি" নামে পরিচিতি লাভ করে।
২. ব্যাংক বিরোধিতা
জ্যাকসন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম জাতীয় ব্যাংক (Bank of the United States) এর তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি মনে করতেন যে এটি একটি বিশেষ শ্রেণির পক্ষে লাভজনক এবং সাধারণ জনগণের জন্য ক্ষতিকারক। ১৮৩৩ সালে, তিনি ব্যাংকটির পুনর্নবীকরণ (re-chartering) বন্ধ করে দেন, যা তার শাসনের অন্যতম বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল।
৩. অ্যাশলি-চেরোকি ইন্ডিয়ান নীতি
এটা একটি অত্যন্ত বিতর্কিত দিক ছিল। জ্যাকসন তার শাসনের সময়ে "টারিফ ওফ রেমুভাল" (Indian Removal Act) পাস করান, যা আদিবাসীদের পশ্চিমে সংরক্ষিত ভূমিতে স্থানান্তরিত করতে বাধ্য করেছিল। এই নীতি বাস্তবায়ন করার ফলে হাজার হাজার আদিবাসী মারা যায়, বিশেষত চেরোকি জাতির লোকেরা যাকে আজ "ট্রেইল অব টিয়ারস" বলা হয়।
মৃত্যুর পরের উত্তরাধিকার
১৮৩৭ সালে, যখন তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অবসর নেন, জ্যাকসনের শাসন একটি অস্থির অর্থনৈতিক সময়ের মধ্যে পড়েছিল। তবে, তাঁর রাজনৈতিক কৌশল, বিশেষত ব্যাংক বিরোধিতা, আধুনিক মার্কিন রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তিনি ১৮৪৫ সালের ৮ জুন ৭৮ বছর বয়সে তার বাড়িতে মারা যান।
জ্যাকসনের শাসনকালে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি:
- জনপ্রিয় শাসক হিসেবে পরিচিতি: তিনি সাধারণ জনগণের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন এবং “জনতার প্রেসিডেন্ট” হিসাবে পরিচিত ছিলেন।
- জাতীয় ব্যাংক বন্ধ করা: তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ব্যাংকটি বন্ধ করে দেন, যা তাঁর শাসনের একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত।
- আদিবাসী স্থানান্তর নীতি: "Indian Removal Act" এবং "Trail of Tears" এর জন্য তিনি অনেক সমালোচিত হয়েছিলেন।
- গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা: তিনি মার্কিন রাজনীতিতে আধুনিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভিত্তি স্থাপন করেন এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেন।
উপসংহার
আন্দ্রে জ্যাকসন ছিলেন একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা, তবে তাঁর শাসন ও নীতির মধ্যে অনেক বিতর্কও রয়েছে। তিনি একজন শক্তিশালী নেতা ছিলেন, কিন্তু তাঁর কিছু নীতি, বিশেষত আদিবাসী নীতির ক্ষেত্রে, এখনো ইতিহাসের আলোচ্য বিষয়। তিনি আমেরিকান রাজনীতিতে যে পরিবর্তন এনে দিয়েছেন, তা আজও অনুভূত হয়।
What's Your Reaction?






