মানুষ না হয়ে (১০) দশটি প্রাণি জান্নাতে যাবে
মানুষ না হয়ে (১০) দশটি প্রাণি জান্নাতে যাবে
ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, কিছু নির্দিষ্ট প্রাণী আছে যারা জান্নাতে যাবে — যদিও এই বিষয়টি কোরআন বা হাদীসে খুব বিস্তারিতভাবে উল্লেখ নেই, তবে কিছু হাদীস ও ইসলামি ইতিহাসের আলোকে কয়েকটি প্রাণীর কথা বলা হয়ে থাকে যাদের জান্নাতে যাওয়ার সম্ভাবনা বা প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সাধারণভাবে যেসব প্রাণীর নাম উল্লেখ করা হয়, তারা হলো:
১. হযরত ইবরাহিম (আঃ)-এর বাছুর
হযরত ইবরাহিম (আঃ)-এর কাছে ফেরেশতা রূপে অতিথি এসেছিলেন। তিনি অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য একটি মোটা তাজা বাছুর জবাই করে রান্না করেছিলেন (সূরা হূদ, ১১:৬৯)। যদিও তারা সেই খাবার খাননি, এতে হযরত ইবরাহিম (আঃ) আশ্চর্য হন। এই বাছুরকে সম্মানজনক একটি প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২. হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর দুম্বা
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর আদেশে পুত্র ইসমাইল (আঃ)-কে কুরবানি করতে প্রস্তুত হন। আল্লাহ তা'আলা তাঁর আনুগত্যে খুশি হয়ে ইসমাইল (আঃ)-এর পরিবর্তে জান্নাত থেকে একটি দুম্বা পাঠান। এটি হলো কুরবানির সূচনা, এবং সেই দুম্বা জান্নাতি প্রাণী হিসেবে গণ্য হয়।
৩. হযরত সালেহ (আঃ)-এর উট
আদ জাতিকে আল্লাহ একটি নিদর্শন হিসেবে একটি বিশেষ উট পাঠান। এই উটকে "নাকাতুল্লাহ" বলা হয় — অর্থাৎ "আল্লাহর উট"। কিন্তু সেই জাতি এই উটকে হত্যা করে, যার ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের ওপর কঠিন আজাব আসে (সূরা আশ-শামস, ৯১:১৩-১৫)।
৪. হযরত ইউনুস (আঃ)-এর মাছ
হযরত ইউনুস (আঃ) যখন নিজের জাতিকে রাগ করে ছেড়ে চলে যান, আল্লাহ তাঁকে একটি বিশাল মাছের মাধ্যমে শাস্তি দেন, যাতে তিনি নিজের ভুল উপলব্ধি করেন। এই মাছ আল্লাহর নির্দেশে ইউনুস (আঃ)-কে নিরাপদে রক্ষা করে, পরে তাকে উপকূলে ছেড়ে দেয়। (সূরা আস-সাফফাত, ৩৭:১৪২-১৪৫)
৫. হযরত মুসা (আঃ)-এর গাভী
সূরা বাকারা-তে বনি ইসরাঈলের এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সমাধানে আল্লাহ নির্দেশ দেন একটি বিশেষ গাভী জবাই করতে। সেই গাভীর অস্থির স্পর্শে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করা হয়, যা ছিল এক বিস্ময়কর নিদর্শন।
৬. হযরত উযাইর (আঃ)-এর গাধা
আল্লাহ হযরত উযাইর (আঃ)-কে মৃত্যু দিয়ে ১০০ বছর পর জীবিত করেন। তার গাধাকেও পুনরুজ্জীবিত করা হয়, যা ছিল এক বিরল ঘটনা এবং আল্লাহর কুদরতের প্রমাণ (সূরা বাকারা, ২:২৫৯)।
৭. হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর পিপিলিকা (পিঁপড়া)
একবার হযরত সুলাইমান (আঃ) তার বাহিনী নিয়ে চলছিলেন, তখন একটি পিঁপড়া তার জাতিকে বলেছিল—“সুলাইমানের বাহিনী এসে তোমাদের পিষে ফেলবে, গর্তে ঢুকে পড়ো।” আল্লাহ পিঁপড়ার কথা হযরত সুলাইমানকে শোনান, এবং তিনি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন (সূরা আন-নামল, ২৭:১৮-১৯)।
৮. হযরত বিলকিছের হুদহুদ পাখি
এই হুদহুদ পাখি সাবা রাজারী বিলকিছ সম্পর্কে হযরত সুলাইমান (আঃ)-কে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ দেয়, যা কোরআনে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে (সূরা আন-নামল, ২৭:২০-২২)। এর মাধ্যমে সুলাইমান (আঃ) বিলকিছকে ইসলামের পথে আহ্বান করেন।
৯. আসহাবে কাহাফ-এর কুকুর
গুহাবাসী ঈমানদার যুবকদের সঙ্গে একটি কুকুর ছিল, যেটি তাদের রক্ষা করেছিল এবং তাদের সাহচর্য দিয়েছিল। কোরআনের সূরা কাহাফে এই কুকুরটির কথা স্পষ্টভাবে এসেছে (সূরা কাহাফ, ১৮:১৮, ২২)। এটি জান্নাতে যাওয়া কুকুর হিসেবে বিবেচিত হয়।
১০. রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বোরাক
মেরাজের রাতে আল্লাহর নবী (সঃ) বোরাক নামক একটি আকাশবাহী জানোয়ার বাহনে মক্কা থেকে জেরুজালেম এবং সেখান থেকে আসমানে গমন করেন। বোরাক অত্যন্ত গতিসম্পন্ন এবং আকাশযাত্রার উপযোগী বাহন ছিল।
এই ১০টি প্রাণীর প্রতিটি কোনো না কোনোভাবে আল্লাহর নিদর্শন, রহমত অথবা নবীদের সাহচর্যের মাধ্যমে সম্মানিত হয়েছে। তাই ইসলামি ব্যাখ্যার আলোকে এদের জান্নাতে যাওয়া নিয়ে বিশ্বাস প্রচলিত।
আপনি চাইলে এদের মধ্যে যেকোনো একটি কাহিনি আরও বিস্তারিতভাবে জানতে পারেন। কোনটি আগে জানতে আগ্রহী? 😊
What's Your Reaction?






