হযরত ইউসুফ (আঃ)এরজীবনী
হযরত ইউসুফ (আঃ),জীবনী

হযরত ইউসুফ (আঃ)এরজীবনীঃ হযরত ইউসুফ (আঃ) হলেন ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ নবি, যাঁর জীবনী কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। তাঁর অনেক দিক থেকে শিক্ষণীয় এবং পরিপূর্ণ। ইউসুফ (আঃ) এর গল্প কুরআনের সুরা ইউসুফ-এ বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে।
পিতামাতা এবং পরিবার:
হযরত ইউসুফ (আঃ) ছিলেন হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর পুত্র। তাঁর মা ছিলেন রাহিল (আঃ)। হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর ১২টি পুত্র ছিল, এবং ইউসুফ (আঃ) ছিলেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয়। তাঁর একটি ছোট ভাইও ছিল, যাঁর নাম বিন্যামিন।
সপ্নের ঘটনা:
হযরত ইউসুফ (আঃ) একদিন স্বপ্ন দেখেন যে, তিনি এবং তাঁর ভাই-বোনেরা একসাথে খড়ের এক গুচ্ছের চারপাশে দাঁড়িয়ে আছেন, এবং তাঁর খড়ের গুচ্ছটি অন্যান্য ভাইদের গুচ্ছকে তুষ্ট করছে। এই স্বপ্নটি হযরত ইউসুফ (আঃ) তাঁর পিতার কাছে বললে, হযরত ইয়াকুব (আঃ) বুঝতে পারেন যে, এটি ভবিষ্যতের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত।
সহোদর ভাইদের ষড়যন্ত্র:
হযরত ইউসুফ (আঃ) এর প্রিয়ত্ব দেখে তাঁর ভাইয়েরা খুব রেগে যায় এবং তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র শুরু করে। পরে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেয় ইউসুফ (আঃ) কে এক গহ্বরে ফেলে দিবে, যাতে তাঁর পিতা তাঁকে আর খুঁজে না পান। তাঁরা ইউসুফ (আঃ) কে গহ্বরে ফেলে, এবং তার পোশাকের রক্ত মাখানো অংশ নিয়ে পিতার কাছে নিয়ে এসে জানান যে, তিনি কোনও পশুর দ্বারা খেয়ে ফেলা হয়েছে।
মিসরে বিক্রির ঘটনা:
একটি বাণিজ্যিক কাফেলা ইউসুফ (আঃ) কে গহ্বর থেকে তুলে মিসরে বিক্রি করে দেয়। সেখানে তিনি এক ধনী ব্যক্তির কাছে বিক্রি হন, যার নাম আজিজ ছিল। কিন্তু পরে তাঁর স্ত্রীর দ্বারা অপব্যবহৃত হওয়ার পর তিনি কারাগারে পাঠানো হয়।
কারাগারে দিন:
হযরত ইউসুফ (আঃ) কারাগারে থাকাকালীন দুই ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে তাদের স্বপ্নের ব্যাখ্যা চাইলে, তিনি আল্লাহর সাহায্যে তাদের স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা দেন। পরে একদিন মিশরের রাজা, ফিরআউন, একটি বিভ্রান্তিকর স্বপ্ন দেখে, যা ইউসুফ (আঃ) এর কাছে ব্যাখ্যা করা হয়।
খ্যাতি ও ক্ষমতা:
ফিরআউন তাঁর স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়ার পর, হযরত ইউসুফ (আঃ) কে মিসরের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। তিনি মিসরে দুর্ভিক্ষের সময় প্রস্তুতি নিয়ে দেশবাসীকে সাহায্য করেছিলেন।
পুনর্মিলন:
একদিন, তাঁর ভাইরা খাদ্য কেনার জন্য মিসরে আসেন, তবে তাঁরা ইউসুফ (আঃ) কে চিনতে পারেননি। ইউসুফ (আঃ) তাঁদের পরিচয় গোপন রেখে, বিভিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে তাঁদের সাথে সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ করেন এবং পরে তাঁর পরিবারের সকল সদস্যকে মিসরে নিয়ে আসেন। এরপর তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুব (আঃ) তাঁকে আলিঙ্গন করেন এবং সবাই একসাথে সুখী জীবন কাটাতে শুরু করেন।
মৃত্যু:
হযরত ইউসুফ (আঃ) পরকালেও সম্মানিত আছেন, এবং তাঁর জীবনী মানুষকে ধৈর্য, সহানুভূতি, আত্মবিশ্বাস, এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা রাখার শিক্ষা দেয়।
শিক্ষা:
হযরত ইউসুফ (আঃ) এর জীবনী থেকে অনেক মূল্যবান শিক্ষা পাওয়া যায়, যেমন:
- ধৈর্য – কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য রাখা।
- আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস – সব পরিস্থিতিতে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখা।
- মাফ করার শিক্ষা – একে অপরকে ক্ষমা করার মহত্ত্ব।
- অন্তর্যামী হওয়া – অন্যের দুঃখ-দুর্দশা বুঝতে চেষ্টা করা।
এটি হযরত ইউসুফ (আঃ) এর জীবন ও তাঁর ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ।
What's Your Reaction?






