তুলসীদাসের জীবনী
তুলসীদাস, জীবনী

বিষয় | তথ্য |
---|---|
পূর্ণ নাম | গোস্বামী তুলসীদাস (Tulsidas) |
জন্ম | আনুমানিক ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দ |
জন্মস্থান | রাজাপুর, বান্দা জেলা, উত্তরপ্রদেশ, ভারত |
পিতা | আত্মারাম দুবে |
মাতা | হুলসি দেবী |
ধর্ম | হিন্দু (ভক্তিবাদ) |
পেশা | কবি, সন্ত, দার্শনিক |
সাহিত্যধারা | ভক্তি সাহিত্য, ধর্মীয় সাহিত্য |
প্রধান রচনা | রামচরিতমানস, বিনয়পত্রিকা, দোহাবলী |
উল্লেখযোগ্য মতবাদ | ভক্তিবাদ, শ্রী রামের প্রতি ভক্তি |
মৃত্যু | আনুমানিক ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দ |
মৃত্যুস্থান | বারাণসী, ভারত |
জন্ম ও শৈশব
তুলসীদাসের জন্ম আনুমানিক ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশের রাজাপুর গ্রামে হয়েছিল। জন্মের সময়ই বলা হয় তিনি ১২ মাসের শিশু ছিলেন এবং তাঁর মুখে জন্ম থেকেই "রাম" নাম উচ্চারিত হয়েছিল। তবে জন্মের পরপরই তাঁর বাবা-মা তাঁকে ত্যাগ করেন এবং এক সাধুর তত্ত্বাবধানে তিনি বড় হন।
ধর্মীয় ও দার্শনিক চিন্তাধারা
তুলসীদাস ছিলেন ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কবি। তিনি বিশেষভাবে শ্রী রামের ভক্ত ছিলেন এবং তাঁর রচনাগুলো মূলত রামভক্তি প্রচার করেছিল। তাঁর মতে, ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি এবং সৎ জীবনযাপনই মানুষের প্রধান ধর্ম।
সাহিত্যকর্ম ও অবদান
তুলসীদাস ছিলেন সংস্কৃত এবং অবধি (ভারতের স্থানীয় ভাষা) উভয় ভাষার একজন প্রতিভাবান কবি। তাঁর প্রধান রচনাগুলো নিম্নরূপ—
প্রধান সাহিত্যকর্ম:
১. রামচরিতমানস (Ramcharitmanas)
- এটি তুলসীদাসের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্ম এবং ভারতীয় সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য।
- এই মহাকাব্যে রামের জীবনী কাব্যিকভাবে বর্ণিত হয়েছে।
- এটি সংস্কৃত ভাষায় রচিত রামায়ণ এর একটি সহজ-সরল অবধি ভাষার সংস্করণ, যা সাধারণ মানুষের জন্য বোঝা সহজ ছিল।
- এতে ভক্তি ও ধর্মীয় ভাবনাকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
২. বিনয়পত্রিকা (Vinay Patrika)
- এটি শ্রী রামের প্রতি নিবেদিত একটি ভক্তিমূলক কবিতার সংকলন।
- তুলসীদাস এখানে তাঁর ঈশ্বরপ্রেম এবং ভক্তির গভীরতা প্রকাশ করেছেন।
৩. দোহাবলী (Dohavali)
- এটি তুলসীদাসের রচিত নীতিমূলক দোহার সংকলন।
- এতে মানবজীবন, নৈতিকতা এবং ধর্মীয় শিক্ষা বিষয়ক উপদেশ রয়েছে।
সাহিত্যিক বৈশিষ্ট্য
- ভক্তিমূলক রচনা: তাঁর রচনাগুলো রামভক্তির প্রতি নিবেদিত এবং এতে আধ্যাত্মিক ভাবনার গভীরতা রয়েছে।
- সরল ভাষার ব্যবহার: তুলসীদাস সংস্কৃত ভাষার পরিবর্তে অবধি ভাষায় রচনা করেছেন, যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই তাঁর রচনাগুলো বুঝতে পারে।
- নৈতিকতা ও শিক্ষা: তাঁর রচনাগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষা, মানবজীবনের সত্যতা এবং নৈতিকতাবোধের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
উক্তি ও দার্শনিক চিন্তাধারা
তাঁর কিছু বিখ্যাত উক্তি হলো—
- "राम से बड़ कर नाम"
(রামের চেয়ে নাম বড়, কারণ নামের মাধ্যমেই মানুষ ঈশ্বরকে স্মরণ করতে পারে)। - "संत हृदय नवनीत समाना"
(সাধুদের হৃদয় মাখনের মতো কোমল)।
প্রভাব ও জনপ্রিয়তা
তুলসীদাসের লেখা রামচরিতমানস আজও ভারতীয় সমাজে অত্যন্ত প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে। এটি উত্তর ভারতের প্রতিটি হিন্দু পরিবারের অন্যতম প্রধান ধর্মগ্রন্থ। তাঁর ভক্তিমূলক কাব্যগাথা ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
১৬৮০ সালের দিকে তুলসীদাস বারাণসীতে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পরেও তাঁর রচনা ও শিক্ষা ভারতের সাহিত্য ও ধর্মীয় সংস্কৃতিতে বিশাল প্রভাব ফেলেছে।
উপসংহার
তুলসীদাস ছিলেন ভারতীয় ভক্তি আন্দোলনের অন্যতম পথপ্রদর্শক। তাঁর রচনা শুধু ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে না, বরং তা সামাজিক ও নৈতিক শিক্ষারও এক অনন্য নিদর্শন। তাঁর রচিত রামচরিতমানস ভারতীয় সাহিত্যের একটি অমূল্য রত্ন, যা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক এবং ভক্তদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।
What's Your Reaction?






