ডিয়েগো ম্যারাডোনার জীবনী | Biography of Diego Maradona in Bengali
ডিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা ছিলেন এমন এক খেলোয়াড় যার খেলার জাদু, নেতৃত্ব, এবং বিতর্কিত জীবনযাপন একত্রে তাকে ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় চরিত্র করে তুলেছে। তিনি একাধারে আর্জেন্টিনার জাতীয় নায়ক, ফুটবলের কিংবদন্তি এবং তুমুল আলোচিত এক ব্যক্তিত্ব। তার “Hand of God” গোল কিংবা “Goal of the Century” আজও ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম।

বিষয় | তথ্য |
---|---|
পুরো নাম | ডিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনা |
জন্ম তারিখ | ৩০ অক্টোবর ১৯৬০ |
জন্মস্থান | লানুস, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা |
উচ্চতা | ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি (১.৬৫ মিটার) |
খেলার পজিশন | অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার / ফরোয়ার্ড |
পেশাগত অভিষেক | ১৯৭৬ সালে, আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স |
জাতীয় দল | আর্জেন্টিনা (১৯৭৭–১৯৯৪) |
প্রধান ক্লাবসমূহ | বার্সেলোনা, ন্যাপোলি, সেভিয়া, বোকা জুনিয়র্স |
বিশ্বকাপ অংশগ্রহণ | ১৯৮২, ১৯৮৬, ১৯৯০, ১৯৯৪ |
প্রধান অর্জন | ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জয়, "Goal of the Century" |
মৃত্যুর তারিখ | ২৫ নভেম্বর ২০২০ |
মৃত্যুর স্থান | টিগ্রে, আর্জেন্টিনা |
শৈশব ও ছোটবেলা
ডিয়েগো ম্যারাডোনার জন্ম হয় গরিব পরিবারে, বুয়েনোস আইরেসের এক শহরতলিতে। মাত্র ৮ বছর বয়সে তার ফুটবল প্রতিভা আবিষ্কৃত হয় এবং খুব দ্রুতই তিনি আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হন। ছোটখাটো গড়নের হলেও তার দৃষ্টিনন্দন ড্রিবলিং ও পায়ের জাদু সবার নজর কাড়ে।
ক্লাব ক্যারিয়ার
আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স (১৯৭৬–১৯৮১)
-
প্রথম ৫ বছরেই ১১৬ গোল করেন
-
এই সময়েই জাতীয় দলের দরজা খুলে যায়
বোকা জুনিয়র্স (১৯৮১–১৯৮২)
-
দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্লাবে সাফল্য এনে দেন
বার্সেলোনা (১৯৮২–১৯৮৪)
-
ইউরোপ যাত্রার সূচনা
-
ইনজুরি ও দ্বন্দ্বের কারণে কিছুটা অসুবিধার মুখোমুখি হন
ন্যাপোলি (১৯৮৪–১৯৯১)
-
ক্যারিয়ারের সবচেয়ে উজ্জ্বল সময়
-
ন্যাপোলিকে প্রথমবার সিরি আ শিরোপা এনে দেন (১৯৮৭, ১৯৯০)
-
ক্লাব কিংবদন্তিতে পরিণত হন
সেভিয়া ও বোকা জুনিয়র্স (শেষ অধ্যায়)
-
শেষদিকে খেলেন স্পেন ও দেশে ফিরে
-
১৯৯৭ সালে অবসর
🇦🇷 আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে অবদান
১৯৮৬ বিশ্বকাপ (মেক্সিকো)
-
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় (Golden Ball Winner)
-
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি কিংবদন্তি গোল:
-
"Hand of God"
-
"Goal of the Century" – ৬ জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে গোল
-
১৯৯০ বিশ্বকাপ
-
দলকে ফাইনালে নিয়ে যান, তবে হেরে যান জার্মানির কাছে
১৯৯৪ বিশ্বকাপ
-
ডোপ টেস্টে ব্যর্থ হয়ে বিতর্কিতভাবে বিদায়
অর্জন ও সম্মাননা
-
FIFA Goal of the Century (২০০২)
-
FIFA Player of the Century (মেসির সাথে যুগ্ম)
-
Napoli club legend – তার ১০ নম্বর জার্সি স্থায়ীভাবে তুলে নেওয়া হয়
-
আর্জেন্টিনার জাতীয় নায়ক
বিতর্ক ও ব্যক্তিজীবন
ম্যারাডোনার জীবনের এক বড় অংশ জুড়ে ছিল বিতর্ক:
-
মাদকাসক্তি
-
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা
-
সাংবাদিক ও কোচদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব
-
বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ও অবৈধ সন্তান
তবুও তার জনপ্রিয়তা কখনোই কমেনি।
কোচিং ক্যারিয়ার
অবসরের পর তিনি আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের কোচ হন (২০০৮–২০১০)। এরপর মেক্সিকো ও অন্যান্য ক্লাবে কোচিং করলেও সেভাবে সাফল্য পাননি।
মৃত্যু ও শোক
২৫ নভেম্বর ২০২০ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। গোটা ফুটবল বিশ্বে নেমে আসে শোকের ছায়া। আর্জেন্টিনায় তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয় এবং তার কফিন আর্জেন্টিনা প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে রাখা হয় সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।
ম্যারাডোনার উত্তরাধিকার
ম্যারাডোনা এমন এক নাম — যিনি শুধু গোল করতেন না, একটি জাতিকে গর্বিত করতেন। ফুটবলের প্রতি তার ভালোবাসা, জয় পাওয়ার তৃষ্ণা এবং মাঠে তার ভিন্ন রকম উপস্থিতি ফুটবলের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
উপসংহার
ডিয়েগো ম্যারাডোনা ছিলেন এক বিশাল আবেগ, যাকে ভালোবাসা যায়, ঘৃণা করা যায়, কিন্তু উপেক্ষা করা যায় না। তিনি ছিলেন ফুটবলের ঈশ্বর — ভুলত্রুটি নিয়েও বিশ্বমানবতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
What's Your Reaction?






