হযরত মুসা আঃ এর জীবনী

হযরত মুসা আঃ , জীবনী

Mar 16, 2025 - 09:00
 0  0
হযরত মুসা আঃ এর  জীবনী
হযরত মুসা আঃ এর জীবনী

হযরত মুসা আঃ এর  জীবনী                                                                                          হযরত মুসা (আঃ) ইসলামের একজন মহান নবী, যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে ইসরাইলীদের নেতা এবং শরীয়ত প্রদানকারী হিসেবে প্রেরিত ছিলেন। হযরত মুসা (আঃ) এর জীবন অনেক দিক থেকে প্রভাবিত এবং গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাঁর জীবনী সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো:

জন্ম এবং পরিবার:

হযরত মুসা (আঃ) মিশরের একটি বংশোদ্ভূত ছিলেন। তাঁর পিতা-মাতা ছিলেন ইসরাইলীদের। তাঁর জন্মের সময় মিশরের ফারাউনের নির্দেশ ছিল যে, ইসরাইলী জাতির সব পুত্রশিশু হত্যা করতে হবে, কারণ ফারাউনের শাসনকালে ইসরাইলীরা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছিল এবং তা তার শাসনকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

তাঁর মা, আল্লাহর নির্দেশে, তাঁকে নদীতে ভাসিয়ে দেন। তখন ফারাউনের পরিবারের এক সদস্য তাঁকে উদ্ধার করেন এবং তাঁকে ফারাউনের রাজপ্রাসাদে পালন করা হয়। ফলে, হযরত মুসা (আঃ) ফারাউনের প্রাসাদে বড় হন।

নবুওত ও আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ:

যখন হযরত মুসা (আঃ) বড় হন, তখন আল্লাহ তাঁকে নবুওত প্রদান করেন। আল্লাহ তাঁকে মিশরের শাসক, ফারাউনের বিরুদ্ধে ইসলামের বার্তা পৌঁছানোর জন্য পাঠান। ফারাউন অত্যন্ত খর্ব ও আত্মম্ভরী ছিল এবং আল্লাহর আইন অমান্য করে নিজেকে ঈশ্বর দাবি করেছিল। আল্লাহ মুসা (আঃ) কে সুস্পষ্ট আয়াত (মোহনীয় চিহ্ন) ও শক্তি প্রদান করেন, যার মধ্যে ছিল—নদীকে দুইভাগ করা, হাত থেকে আলো সৃষ্টি হওয়া, সাপের মতো লাঠি তৈরি হওয়া, ইত্যাদি।

ফারাউনের বিরুদ্ধে লড়াই:

হযরত মুসা (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে ফারাউনের কাছে যান এবং তাঁকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানান। তবে, ফারাউন তাঁর অহংকারে পেয়ে মুসা (আঃ) কে অস্বীকার করেন। আল্লাহর নির্দেশে মুসা (আঃ) এবং তাঁর অনুসারীরা মিশরের মাটি ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর, আল্লাহ তাঁকে এবং তাঁর অনুসারীদের সমুদ্র পার হওয়ার ক্ষমতা দেন, যা মুসা (আঃ) এর জন্য একটি বড় নিদর্শন ছিল। আল্লাহর নির্দেশে মুসা (আঃ) সমুদ্রকে দুই ভাগ করে ফেলেন, যার ফলে ইসরাইলীরা নিরাপদে পার হতে পারে এবং ফারাউনের বাহিনী ডুবে যায়।

সিনাই পর্বত এবং তাওরাত:

ইসরাইলীরা সিনাই পর্বতের পাদদেশে পৌঁছালে, সেখানে আল্লাহ হযরত মুসা (আঃ) এর সাথে কথা বলেন এবং তাঁকে তাওরাত নামক শাস্ত্র প্রদান করেন। তাওরাত ছিল ইসরাইলীদের জন্য এক বিশেষ আইনগ্রন্থ। তাওরাতের মধ্যে ছিল সামাজিক, নৈতিক, ধর্মীয় এবং আইনি বিধান। মুসা (আঃ) ৪০ দিন সেখানে অবস্থান করেছিলেন।

৪০ বছর মিশরে:

হযরত মুসা (আঃ) এর নেতৃত্বে ইসরাইলীরা ৪০ বছর মিশরের মরুভূমিতে ভ্রাম্যমাণ ছিলেন। এই সময়কালে, ইসরাইলীরা কিছু সময়ের জন্য আল্লাহর নির্দেশ পালন থেকে বিরত হয়েছিল, কিন্তু হযরত মুসা (আঃ) তাদের উপদেশ দিয়ে শুদ্ধ পথে পরিচালিত করার চেষ্টা করেছিলেন।

মৃত্যু:

হযরত মুসা (আঃ) মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহ তাকে নির্দেশ দেন, তিনি তাঁর মৃত্যুর পর নতুন একজন নেতা নিয়োগ করবেন, এবং সেখানেই তাঁর শুদ্ধতার যাত্রা শেষ হয়। হযরত মুসা (আঃ) মৃত্যুবরণ করার পর, তাঁর পরবর্তী নেতা হযরত যুসুআ (আঃ) ইসরাইলীদের নেতৃত্বে ছিলেন।

উপসংহার:

হযরত মুসা (আঃ) ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নবী এবং তাঁর জীবনের ঘটনা আমাদের জন্য অনেক শিক্ষণীয়। তাঁর সাহসিকতা, ঈমানের দৃঢ়তা, আল্লাহর প্রতি অটুট আস্থা এবং জনগণের প্রতি তার ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ আজও মানবজাতির জন্য উদাহরণ।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0