মেঘনাদ সাহার জীবনী

মেঘনাদ সাহা, জীবনী

Mar 21, 2025 - 02:24
Mar 21, 2025 - 09:02
 0  0
মেঘনাদ সাহার জীবনী

বিষয় তথ্য
পূর্ণ নাম মেঘনাদ সাহা (Meghnad Saha)
জন্ম ৬ অক্টোবর ১৮৯৩
জন্মস্থান শেওরাতলি গ্রাম, ঢাকা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)
পিতা জগন্নাথ সাহা
মাতা ভুবনেশ্বরী দেবী
ধর্ম হিন্দু
পেশা পদার্থবিদ, অধ্যাপক, বিজ্ঞানী
প্রধান অবদান সাহা আয়নাইজেশন তত্ত্ব (Saha Ionization Equation)
প্রতিষ্ঠান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতীয় বিজ্ঞান সংস্থা
পুরস্কার ও সম্মান ফরাসি একাডেমির সম্মানজনক পদক, রয়্যাল সোসাইটির ফেলোশিপ
মৃত্যু ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬
মৃত্যুস্থান দিল্লি, ভারত

জন্ম ও প্রাথমিক শিক্ষা

মেঘনাদ সাহার জন্ম ১৮৯৩ সালের ৬ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকার শেওরাতলি গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে। তাঁর পিতা ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, তাই শিক্ষাজীবনে অনেক আর্থিক বাধার সম্মুখীন হন।

তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তীতে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং স্নাতক সম্পন্ন করেন।

উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন তিনি পদার্থবিদ্যার প্রতি গভীর আগ্রহী হন। তাঁর প্রতিভা দেখে বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তাঁকে উচ্চশিক্ষার জন্য সহায়তা করেন।

তিনি পদার্থবিদ্যার বিখ্যাত গবেষক স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু এবং প্রফুল্লচন্দ্র রায় এর সান্নিধ্যে আসেন এবং তাঁদের উৎসাহে গবেষণায় মনোনিবেশ করেন।

সাহা আয়নাইজেশন তত্ত্ব ও জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যায় অবদান

মেঘনাদ সাহার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈজ্ঞানিক অবদান সাহা আয়নাইজেশন তত্ত্ব (Saha Ionization Equation)।

সাহা আয়নাইজেশন তত্ত্ব কী?
  • এটি একটি জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার মৌলিক তত্ত্ব, যা তারকার বর্ণালীর বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার রাসায়নিক গঠন এবং তাপমাত্রা নির্ণয়ে সহায়তা করে।
  • সাহার এই তত্ত্ব ব্যাখ্যা করে, কীভাবে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান তারকার উচ্চ তাপমাত্রার ফলে আয়নিত হয় এবং কীভাবে এটি তারকার আলোক-বর্ণালীতে প্রতিফলিত হয়।
  • এই গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন নক্ষত্রের রাসায়নিক গঠন এবং তাপমাত্রা সম্পর্কে বিশদ ধারণা লাভ করতে সক্ষম হন।

এই গবেষণার ফলে জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যা একটি নতুন দিক লাভ করে এবং এই তত্ত্ব আলবার্ট আইনস্টাইন ও আর্নেস্ট রাদারফোর্ডের মতো বিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রশংসিত হয়।

অধ্যাপক ও বিজ্ঞান সংগঠক হিসেবে অবদান

  • সাহা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়আলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন এবং বহু বিজ্ঞানী ও গবেষক তৈরি করেছেন।
  • ১৯৩৮ সালে তিনি "ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স"-এর পরিচালক হন।
  • তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস এবং ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স, ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
  • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য তিনি দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (DVC)-এর পরিকল্পনায় কাজ করেন।

বিজ্ঞান ও রাজনীতির সংযোগ

স্বাধীনতার পর মেঘনাদ সাহা ভারতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং দেশীয় বিজ্ঞান উন্নয়নের জন্য কাজ করেন।

  • তিনি ভারতের পরমাণু শক্তি গবেষণার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
  • তাঁর উদ্যোগেই ভারতে ক্যালেন্ডার সংস্কার করে বৈজ্ঞানিক ক্যালেন্ডার চালু করা হয়।

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • রয়্যাল সোসাইটির ফেলোশিপ (FRS)
  • ফরাসি একাডেমির সম্মানসূচক পুরস্কার
  • কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার

মেঘনাদ সাহা ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬ সালে দিল্লিতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর আবিষ্কার আজও জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাঁর নাম বিশ্বের বিজ্ঞান গবেষণায় অমর হয়ে আছে।


উপসংহার

মেঘনাদ সাহা ছিলেন এক অসাধারণ বিজ্ঞানী, যাঁর গবেষণা আধুনিক জ্যোতিঃপদার্থবিদ্যার ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। তাঁর "সাহা আয়নাইজেশন তত্ত্ব" তারার রাসায়নিক গঠন ও তাপমাত্রা নির্ধারণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। শুধু বিজ্ঞান গবেষণায় নয়, ভারতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর জীবন ও কর্ম বিশ্বের বিজ্ঞান গবেষকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0