আল মাহমুদের জীবনী
আল মাহমুদ, জীবনী

বিষয় | তথ্য |
---|---|
পুরো নাম | মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ |
জন্ম | ১১ জুলাই ১৯৩৬ |
জন্মস্থান | মোড়লগঞ্জ, বাগেরহাট, বাংলাদেশ |
শিক্ষা | প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সীমিত, স্বশিক্ষিত |
পেশা | কবি, ঔপন্যাসিক, সাংবাদিক |
উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ | "সোনালী কাবিন", "লোক লোকান্তর", "মায়াবী পর্দা দুলে ওঠে" |
উপন্যাস | "কবি ও কোলাহল", "উপমহাদেশ", "ডাহুকী" |
প্রভাবিত হয়েছেন | জীবনানন্দ দাশ, কাজী নজরুল ইসলাম, মুসলিম ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি |
মূল সাহিত্যিক ধারা | আধুনিক কবিতা, মুসলিম ঐতিহ্যবাহী কাব্যচর্চা |
পুরস্কার | একুশে পদক (১৯৮৭), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৮) |
মৃত্যু | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ |
মৃত্যুস্থান | ঢাকা, বাংলাদেশ |
জন্ম ও শৈশব
আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মীর আবদুর রব ছিলেন একজন সাধারণ ব্যবসায়ী এবং মাতা রওশন আরা খাতুন ছিলেন গৃহিণী।
শিক্ষা ও সাহিত্যযাত্রা
আল মাহমুদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন দীর্ঘস্থায়ী না হলেও তিনি স্বশিক্ষিত হয়ে সাহিত্য ও কবিতায় গভীর দক্ষতা অর্জন করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি কবিতা ও সাহিত্যচর্চা শুরু করেন।
তার সাহিত্যজীবন শুরু হয় ১৯৫০-এর দশকে। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকায় আসেন এবং সাহিত্যচর্চা ও সাংবাদিকতা শুরু করেন।
সাহিত্যকর্ম ও অবদান
কবিতা
আল মাহমুদ মূলত আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি। তার কবিতায় মুসলিম ঐতিহ্য, গ্রামবাংলার রূপ, প্রেম, প্রকৃতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের চিত্র ফুটে উঠেছে।
উল্লেখযোগ্য কবিতাগ্রন্থ:
- "লোক লোকান্তর" (১৯৬৩) – তার প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ।
- "কালের কলস" (১৯৬৬) – আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংযোজন।
- "সোনালী কাবিন" (১৯৭৩) – তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ, যেখানে মুসলিম ঐতিহ্য, প্রেম ও প্রকৃতি একসঙ্গে মিশেছে।
- "মায়াবী পর্দা দুলে ওঠে" (১৯৭৬) – আধুনিক কবিতার এক অনন্য সংযোজন।
উপন্যাস
আল মাহমুদ শুধুমাত্র কবি নন, তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাসও রচনা করেছেন।
উল্লেখযোগ্য উপন্যাস:
- "কবি ও কোলাহল" – একজন কবির জীবনসংগ্রামের কাহিনি।
- "উপমহাদেশ" – ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরা হয়েছে।
- "ডাহুকী" – গ্রামীণ জীবনের বাস্তবতা ও মানবিক অনুভূতির সংমিশ্রণ।
সাংবাদিকতা ও রাজনৈতিক জীবন
আল মাহমুদ সাংবাদিক হিসেবেও কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। তিনি দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করেছেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক পদে নিযুক্ত হন এবং দীর্ঘদিন এ দায়িত্ব পালন করেন।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
আল মাহমুদ তার সাহিত্যকর্মের জন্য বহু পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছেন।
- বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৮)
- একুশে পদক (১৯৮৭)
- জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার
- মহাকবি কাশীরাম দাস সাহিত্য পুরস্কার
ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যু
আল মাহমুদ ব্যক্তিগত জীবনে একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম ছিলেন। তার সাহিত্যেও ইসলামী ভাবধারা স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়।
২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, ৮২ বছর বয়সে তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
উপসংহার
আল মাহমুদ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি, যিনি তার কবিতা ও উপন্যাসের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার সাহিত্য মুসলিম ঐতিহ্য, গ্রামবাংলার জীবন, প্রেম ও প্রকৃতির সৌন্দর্যকে অসাধারণভাবে চিত্রিত করেছে। বিশেষ করে "সোনালী কাবিন" বাংলা কবিতার এক অমূল্য সম্পদ। মৃত্যুর পরও তিনি তার রচনার মাধ্যমে পাঠকের হৃদয়ে বেঁচে আছেন।
What's Your Reaction?






