ফররুখ আহমদের জীবনী
ফররুখ আহমদ, জীবনী

বিষয় | তথ্য |
---|---|
পুরো নাম | ফররুখ আহমদ |
উপাধি | ইসলামী চেতনার কবি, মহাকবি |
জন্ম | ১০ জুন ১৯১৮ |
জন্মস্থান | মাগুরা, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ) |
শিক্ষা | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস |
পেশা | কবি, লেখক, সাংবাদিক, সরকারী চাকরিজীবী |
উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ | "সাত সাগরের মাঝি", "সিরাজাম মুনীরা", "লাশ", "নৌফেল ও হাতেম" |
মূল সাহিত্যিক ধারা | ইসলামী চেতনার কবিতা, রোমান্টিকতা, সমাজ সচেতনতা |
প্রভাবিত হয়েছেন | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, ইসলামী ইতিহাস ও সংস্কৃতি |
পুরস্কার ও স্বীকৃতি | বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬০), একুশে পদক (১৯৭৭, মরণোত্তর), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮০, মরণোত্তর) |
মৃত্যু | ১৯ অক্টোবর ১৯৭৪ |
মৃত্যুস্থান | ঢাকা, বাংলাদেশ |
জন্ম ও শৈশব
ফররুখ আহমদ ১৯১৮ সালের ১০ জুন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত মাগুরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ হাতেম আলী এবং মাতার নাম বেগম রওশন আখতার। শৈশব থেকেই তিনি মেধাবী ছিলেন এবং সাহিত্যচর্চার প্রতি গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেন।
শিক্ষাজীবন
- মাগুরা জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন।
- কলকাতা রিপন কলেজ ও স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াশোনা করেন।
- পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
সাহিত্যকর্ম ও অবদান
কবিতা
ফররুখ আহমদ বাংলা সাহিত্যে ইসলামী ভাবধারার অন্যতম প্রধান কবি। তার কবিতায় মুসলিম সভ্যতা, সমাজতন্ত্র, সংগ্রাম ও মানবতাবাদ ফুটে উঠেছে।
উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ:
- "সাত সাগরের মাঝি" (১৯৪৪) – তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা, যেখানে ইসলামী ঐতিহ্য ও সমাজচেতনার মিশ্রণ রয়েছে।
- "সিরাজাম মুনীরা" – ইসলামী চেতনার ওপর ভিত্তি করে লেখা কাব্যগ্রন্থ।
- "লাশ" – মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত।
- "নৌফেল ও হাতেম" – ইসলামী ঐতিহ্যভিত্তিক কাব্যগ্রন্থ।
নাটক ও শিশু সাহিত্য
- "চিরদিনের ফেরারী" – ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে রচিত নাটক।
- "রূপকথার রাজা" – শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা জনপ্রিয় গ্রন্থ।
সাংবাদিকতা ও চাকরিজীবন
ফররুখ আহমদ সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি সাংবাদিকতা ও সরকারি চাকরিতেও যুক্ত ছিলেন।
- তিনি ঢাকা বেতারে চাকরি করতেন এবং বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন।
- সাংবাদিক হিসেবে তিনি ইসলামী ভাবধারার প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখেন।
রাজনৈতিক ও দার্শনিক চিন্তাধারা
ফররুখ আহমদের সাহিত্য ছিল ইসলামি আদর্শ ও মানবতার ওপর ভিত্তি করে গঠিত। তিনি মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণের স্বপ্ন দেখতেন এবং তার লেখায় এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
- তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে প্রভাবিত ছিলেন।
- পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পক্ষে থাকলেও তিনি পরবর্তীতে সামরিক শাসনের সমালোচনা করেন।
- বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ইসলামী সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারের ওপর গুরুত্ব দেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
ফররুখ আহমদ তার অসামান্য সাহিত্যকর্মের জন্য বিভিন্ন পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছেন:
- বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬০)
- একুশে পদক (১৯৭৭, মরণোত্তর)
- স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮০, মরণোত্তর)
ব্যক্তিগত জীবন ও মৃত্যু
ফররুখ আহমদ ব্যক্তিগত জীবনে একজন ধর্মপরায়ণ মুসলিম ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ১৯ অক্টোবর তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
উপসংহার
ফররুখ আহমদ বাংলা সাহিত্যের একজন অবিস্মরণীয় কবি, যিনি ইসলামী চেতনা, দেশপ্রেম, মানবতা ও সমাজ সংস্কারের কথা বলেছেন। তার সাহিত্যচর্চা আজও বাংলা ভাষার পাঠকদের অনুপ্রেরণা দেয়। "সাত সাগরের মাঝি" এবং "সিরাজাম মুনীরা" তাকে বাংলা সাহিত্যে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।
What's Your Reaction?






