গ্যারিঙ্কা (ব্রাজিল) এর জীবনী | Biography of Garrincha (Brazil)

গ্যারিঙ্কা — যার নাম ব্রাজিলিয়ান হৃদয়ে লেখা আছে ভালোবাসা ও বিষাদের কালি দিয়ে। তিনি ছিলেন ড্রিবলিং-এর জাদুকর, যার পায়ের কারুকাজে পৃথিবীর সেরা ডিফেন্ডাররাও বিভ্রান্ত হতেন। পেলে যতোটা পারফেকশন, গ্যারিঙ্কা ততটাই অনিয়মিত এক বিস্ময়, যিনি ফুটবলকে শিল্পে রূপ দিয়েছিলেন।

May 19, 2025 - 07:07
May 19, 2025 - 07:49
 0  0
গ্যারিঙ্কা (ব্রাজিল) এর জীবনী | Biography of Garrincha (Brazil)
Garrincha
বিষয় তথ্য
পুরো নাম মানুয়েল ফ্রান্সিসকো দোস সান্তোস (Garrincha)
ডাকনাম গ্যারিঙ্কা ("ছোট পাখি")
জন্ম তারিখ ২৮ অক্টোবর ১৯৩৩
মৃত্যু ২০ জানুয়ারি ১৯৮৩ (বয়স ৪৯)
জন্মস্থান পাও দোস ফেররোস, ব্রাজিল
উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি (১.৬৯ মিটার)
পজিশন উইঙ্গার (রাইট উইং)
জাতীয় দলে খেলা ৫০ ম্যাচ, ১২ গোল (১৯৫৫–১৯৬৬)
ক্লাবসমূহ বোটাফোগো (সর্বাধিক পরিচিত), করিন্থিয়ান্স, আরও কয়েকটি
প্রধান অর্জন (জাতীয়) ২x বিশ্বকাপ (১৯৫৮, ১৯৬২)
বিশেষ বৈশিষ্ট্য অপ্রতিরোধ্য ড্রিবলিং, বাঁকা পা, স্বাধীন খেলা

শৈশব ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা

গ্যারিঙ্কার জন্ম হয় এক দরিদ্র পরিবারে। জন্ম থেকেই তার দুই পায়ের গঠন ছিল অস্বাভাবিক — একটি ছোট, অপরটি বাঁকা। এই অঙ্গবিকৃতি তাকে কখনো থামাতে পারেনি; বরং এটিই তার ড্রিবলিংয়ের এক অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যে রূপ নেয়।


ক্লাব ক্যারিয়ার

বোটাফোগো (১৯৫৩–১৯৬৫)

  • ব্রাজিলের অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাবে খেলেন ১২ বছর

  • ক্লাবের হয়ে ৫৮১ ম্যাচে ২৩২ গোল

  • পেলে, দিদি ও নিঢেলসনদের সঙ্গে খেলতেন

  • বারবার প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করে ফুটবলপ্রেমীদের মন জয় করেন

অন্যান্য ক্লাব

  • ক্লাব ক্যারিয়ারের শেষের দিকে করিন্থিয়ান্স, ফ্লামিনেন্স এবং কিছু ছোট ক্লাবে খেলেন


🇧🇷 জাতীয় দলের কিংবদন্তি

 ১৯৫৮ বিশ্বকাপ (সুইডেন)

  • ব্রাজিলের প্রথম বিশ্বকাপ জয়

  • ডান উইং থেকে অসংখ্য অ্যাসিস্ট

  • পেলের সঙ্গী হিসেবে আলো ছড়ান

১৯৬২ বিশ্বকাপ (চিলি)

  • পেলে চোটে পড়লে গ্যারিঙ্কা দলের মূল তারকা হন

  • ৪ গোল ও একক নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জয়

  • টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃত

১৯৬৬ বিশ্বকাপ

  • পারফরম্যান্সে পতন

  • এটি ছিল জাতীয় দলের হয়ে তার শেষ টুর্নামেন্ট


খেলার স্টাইল

  • স্বাভাবিক গতিবিধির বাইরে গিয়ে প্রতিপক্ষকে বোকা বানাতে পারতেন

  • তাঁর “স্টপ-স্টার্ট” ড্রিবলিং আজও অনুপ্রেরণা

  • জীবনে কখনোই একজন পেশাদার কোচের নির্দেশনায় চলতেন না — তিনি খেলতেন নিজের আনন্দে


ব্যক্তিগত জীবন ও সংগ্রাম

  • গ্যারিঙ্কা মদ্যপান, গাড়ি দুর্ঘটনা এবং অর্থনৈতিক দারিদ্র্যে জর্জরিত হন

  • বহু সন্তান এবং অস্থির ব্যক্তিগত জীবন

  • ব্রাজিলে তার প্রতি ভালোবাসা থাকলেও, জীবনের শেষভাগ কেটেছে একাকীত্বে


মৃত্যু ও উত্তরাধিকার

  • ১৯৮৩ সালে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মদ্যপানের জটিলতায় মৃত্যু

  • তার কফিনে লেখা ছিল: “ফুটবলের আনন্দ”

  • ব্রাজিলে এখনও তাকে বলা হয় "Alegria do Povo" – “জনগণের আনন্দ”


উপসংহার

গ্যারিঙ্কা ছিলেন ফুটবলের এক অসাধারণ কবি — যিনি নিয়ম জানতেন না, কিন্তু খেলতেন হৃদয় দিয়ে। পেলের সঙ্গে জুটি গড়েই তিনি রচনা করেন ফুটবলের সোনালি অধ্যায়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি প্রমাণ করেন — “ফুটবল খেলা হয় পা দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়ে।”

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0