গ্যারিঙ্কা (ব্রাজিল) এর জীবনী | Biography of Garrincha (Brazil)
গ্যারিঙ্কা — যার নাম ব্রাজিলিয়ান হৃদয়ে লেখা আছে ভালোবাসা ও বিষাদের কালি দিয়ে। তিনি ছিলেন ড্রিবলিং-এর জাদুকর, যার পায়ের কারুকাজে পৃথিবীর সেরা ডিফেন্ডাররাও বিভ্রান্ত হতেন। পেলে যতোটা পারফেকশন, গ্যারিঙ্কা ততটাই অনিয়মিত এক বিস্ময়, যিনি ফুটবলকে শিল্পে রূপ দিয়েছিলেন।

বিষয় | তথ্য |
---|---|
পুরো নাম | মানুয়েল ফ্রান্সিসকো দোস সান্তোস (Garrincha) |
ডাকনাম | গ্যারিঙ্কা ("ছোট পাখি") |
জন্ম তারিখ | ২৮ অক্টোবর ১৯৩৩ |
মৃত্যু | ২০ জানুয়ারি ১৯৮৩ (বয়স ৪৯) |
জন্মস্থান | পাও দোস ফেররোস, ব্রাজিল |
উচ্চতা | ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি (১.৬৯ মিটার) |
পজিশন | উইঙ্গার (রাইট উইং) |
জাতীয় দলে খেলা | ৫০ ম্যাচ, ১২ গোল (১৯৫৫–১৯৬৬) |
ক্লাবসমূহ | বোটাফোগো (সর্বাধিক পরিচিত), করিন্থিয়ান্স, আরও কয়েকটি |
প্রধান অর্জন (জাতীয়) | ২x বিশ্বকাপ (১৯৫৮, ১৯৬২) |
বিশেষ বৈশিষ্ট্য | অপ্রতিরোধ্য ড্রিবলিং, বাঁকা পা, স্বাধীন খেলা |
শৈশব ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা
গ্যারিঙ্কার জন্ম হয় এক দরিদ্র পরিবারে। জন্ম থেকেই তার দুই পায়ের গঠন ছিল অস্বাভাবিক — একটি ছোট, অপরটি বাঁকা। এই অঙ্গবিকৃতি তাকে কখনো থামাতে পারেনি; বরং এটিই তার ড্রিবলিংয়ের এক অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যে রূপ নেয়।
ক্লাব ক্যারিয়ার
বোটাফোগো (১৯৫৩–১৯৬৫)
-
ব্রাজিলের অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাবে খেলেন ১২ বছর
-
ক্লাবের হয়ে ৫৮১ ম্যাচে ২৩২ গোল
-
পেলে, দিদি ও নিঢেলসনদের সঙ্গে খেলতেন
-
বারবার প্রতিপক্ষকে বিভ্রান্ত করে ফুটবলপ্রেমীদের মন জয় করেন
অন্যান্য ক্লাব
-
ক্লাব ক্যারিয়ারের শেষের দিকে করিন্থিয়ান্স, ফ্লামিনেন্স এবং কিছু ছোট ক্লাবে খেলেন
🇧🇷 জাতীয় দলের কিংবদন্তি
১৯৫৮ বিশ্বকাপ (সুইডেন)
-
ব্রাজিলের প্রথম বিশ্বকাপ জয়
-
ডান উইং থেকে অসংখ্য অ্যাসিস্ট
-
পেলের সঙ্গী হিসেবে আলো ছড়ান
১৯৬২ বিশ্বকাপ (চিলি)
-
পেলে চোটে পড়লে গ্যারিঙ্কা দলের মূল তারকা হন
-
৪ গোল ও একক নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জয়
-
টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃত
১৯৬৬ বিশ্বকাপ
-
পারফরম্যান্সে পতন
-
এটি ছিল জাতীয় দলের হয়ে তার শেষ টুর্নামেন্ট
খেলার স্টাইল
-
স্বাভাবিক গতিবিধির বাইরে গিয়ে প্রতিপক্ষকে বোকা বানাতে পারতেন
-
তাঁর “স্টপ-স্টার্ট” ড্রিবলিং আজও অনুপ্রেরণা
-
জীবনে কখনোই একজন পেশাদার কোচের নির্দেশনায় চলতেন না — তিনি খেলতেন নিজের আনন্দে
ব্যক্তিগত জীবন ও সংগ্রাম
-
গ্যারিঙ্কা মদ্যপান, গাড়ি দুর্ঘটনা এবং অর্থনৈতিক দারিদ্র্যে জর্জরিত হন
-
বহু সন্তান এবং অস্থির ব্যক্তিগত জীবন
-
ব্রাজিলে তার প্রতি ভালোবাসা থাকলেও, জীবনের শেষভাগ কেটেছে একাকীত্বে
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
-
১৯৮৩ সালে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মদ্যপানের জটিলতায় মৃত্যু
-
তার কফিনে লেখা ছিল: “ফুটবলের আনন্দ”
-
ব্রাজিলে এখনও তাকে বলা হয় "Alegria do Povo" – “জনগণের আনন্দ”
উপসংহার
গ্যারিঙ্কা ছিলেন ফুটবলের এক অসাধারণ কবি — যিনি নিয়ম জানতেন না, কিন্তু খেলতেন হৃদয় দিয়ে। পেলের সঙ্গে জুটি গড়েই তিনি রচনা করেন ফুটবলের সোনালি অধ্যায়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি প্রমাণ করেন — “ফুটবল খেলা হয় পা দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়ে।”
What's Your Reaction?






